স্বপ্নজাল
শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp

আমি প্রায়ই স্বপ্নে যা দেখি সেটা সত্যি হয়ে যায়। এই অদ্ভুত সত্যটা আবিষ্কার করেছিলাম একদিন হুট করেই। সেদিনও বুঝিনি আমার জীবনটা একদম পুরোপুরি বদলে দেবে এটা।

তখন ভোর হওয়ার পূর্বমুহূর্ত। গভীর কালো আকাশটা ধীরে ধীরে আলোকিত হতে শুরু করে দিয়েছে। চারদিকে আজানের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিলো। ঘুমের মধ্যেও সেই সুর টের পাচ্ছিলাম আমি। কি করুন সুরে মুয়াজ্জিন ডাক দিয়ে যাচ্ছিলো আল্লাহর ঘরের দিকে আমাদের। বাস্তবে যেটা ছিলো ভোর, আমার স্বপ্নে সেটা মধ্যদুপুর। প্রচন্ড বাজেভাবে বৃষ্টি পড়ছিলো সেই দুপুরে। পরিবেশটা বেশ গুমোট হয়ে আছে। বৃষ্টির শব্দগুলো থাকলেও সেগুলো বেশ হালকা। কানে বাজার মতো শব্দ না করেই অজস্র বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিলো চারদিক। স্বপ্ন বলেই হয়তো সেই অজস্র বৃষ্টির শব্দগুলো বুকের ভেতরে অনুভব করতে পারিনি আমি। অনেকে হয়তো ভাববে, বৃষ্টির শব্দ কানে অনুভব না করে, বুকের ভেতরে কিভাবে অনুভব করে! আমি বুকের কথা বললাম কারণ সেই বৃষ্টিটা ছিলো আমার স্বপ্নে। স্বভাবতই কানে আমি শুনবো বাস্তব, বুকে শুনবো স্বপ্নের শব্দ!

সে যা হোক। বেশিরভাগ সময়ই আমি স্বপ্নে দেখি কারো না কারো মৃত্যু। চেহারাগুলো আবছা থাকে। কিন্তু দেখা যায়, স্বপ্নগুলোর সাথে মিল রেখে মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। তখন স্বপ্নের সাথে মেলালে, স্বপ্নের সেই আবছা চেহারাটা দেখতে পাই আমি। সেই মধ্যদুপুরের বৃষ্টিতে হয়তো চারদিক বেশ নিরিবিলি ছিলো। কিন্তু সেসব ছাপিয়েও আমি দেখলাম একটা এম্বুলেন্স সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছে কোথায় যেনো। আকাশে বজ্রপাত আর পড়ছে বৃষ্টি। শব্দগুলো আস্তে হলেও একদম যে শোনা যাচ্ছেনা এমনও না। আর সেই শব্দের পরেও এম্বুলেন্সের ভেতরের ঘুমোট পরিবেশটা টের পাওয়া যাচ্ছিলো। আমি ঘুমের মধ্যেই চাচ্ছিলাম মানুষটার চেহারাটা একবার দেখতে। পারিনি! এমনকি মানুষটার আশেপাশে বসে থাকা মানুষগুলোর চেহারাও না। ধীরে ধীরে গাড়িটা এসে থামলো তার গন্তব্যে। বাস্তবের আজানের সুর তখনো বাজছে আমার কানে।

দেখলাম কয়েকজন এসে লাশটাকে নামাচ্ছে। জায়গাটা ভীষণ পরিচিত লাগলো আমার। কিন্তু তবুও বুঝতে পারলাম না আসলে জায়গাটা কোথায়। কেমন এক অদ্ভুত স্বপ্নে বাসা বেঁধেছি আমি। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। বৃথাই রহস্যগুলো ঘিরে দীর্ঘ হচ্ছে আমার স্বপ্ন। লোকজন কিসব যেনো বলাবলি করছিলো! স্বপ্নটার গভীরে ডুব দিচ্ছিলাম আমি কেবল। যেতেই টের পেতে লাগলাম একটা লোকের কথা। একদম স্পষ্ট! অফিস শেষে রাস্তার মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো মানুষটা। ঠিক তখনই নাকি একটা বাস এসে তাকে ধাক্কা দিতেই স্পট ডেড হয়ে যায় সে।

এমত অবস্থায় সাধারণত আমার স্বপ্ন থেমে যায়। কিন্তু আজ কেনো যেনো ফুরোচ্ছিলো না কিছুই। না বাইরের বাস্তবে চলতে থাকা আজান, না স্বপ্ন। লাশটার গোসল থেকে শুরু করে পারিবারিক বিদায় পর্যন্ত প্রায় সমস্ত কিছুই স্বপ্নে দেখেছিলাম সেদিন আমি। কিন্তু সবকিছু দেখলেও রহস্য রয়ে গেলো তার চেহারা। যদিও তখন আমি ভেতর ভেতর জানি, আমার দেখা এই স্বপ্নটাও সত্যি হতে যাচ্ছে। লাশটাকে কবরে নামাচ্ছে কিছু লোক। ঠিক তখন দেখলাম যারা নামাচ্ছে তারা আমার পূর্ব পরিচিত। আমার বাবা, চাচা, ভাই। তাদের সবার মুখ ভীষণ কালো হয়ে আছে। একটু হলেই যেনো কেঁদে দেবে তারা। সব কাজ শেষ করে কবরে মাটি দেয়ার সময় টের পেলাম আমার বাবা বলছে, “ছেলেটা আমার আর নাই।” তখনই চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলাম আমি। উঠে দেখলাম, না সব ঠিকই আছে। বেঁচে আছি আমি। কিছুই হয়নি। একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো কেবল! বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় হয়তো স্বপ্নের ভেতরে বাবার ওই কথাটা আমায় ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলো। আমি উঠে বসতেই আজানটা শেষ হতে শুরু করলো। বিছানা ছেড়ে উঠে ফজরের নামাজটা পড়ে নিয়েছিলাম সেদিন। নামাজের পরে আকাশটা দেখতে দারুন লাগছিলো। বাইরে বেশ ঠান্ডা বাতাস। বুক ভরে অনুভব করলাম সেই ঠান্ডা বাতাস।

বেশি সময় হাতে নেই। একটু পরেই অফিস আমার। অথচ অনেক কাজ বাকি। ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লাম কাজে। যথারিতি নাস্তা করে ছুটলাম অফিসে। আমাদের অফিসের কাজ শেষ হয় মধ্যদুপুরে। তবে সেদিন কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো আমার! পরিবেশটাই কেমন যেনো গুমোট ছিলো। অফিস শেষের কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি পড়তেও শুরু করে দিয়েছিলো সেদিন। কাজ শেষে অফিস থেকে বের হলাম আমি। বরাবরের মতো রাস্তার মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখনই রাস্তার ওপারে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম একটা বাস অজস্র গতিতে ধেয়ে আসছে আমার দিকে…!!!

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: