অগোছালো গল্প

“এই যে শুনছেন?”

“জ্বি।”

“এই ঘোছানো শার্ট পরে অফিসে যাবেন?”

“এছাড়া আর কিই বা করব?”

“কেন এটা ছাড়া শার্ট নাই আর?”

“আছে বাট পরবোনা।কেউ তো কাপড়টাকে গুছিয়েও দিলোনা।”

“কেউ গুছিয়ে দিবে কিভাবে? কাল অতো রাত করে ফিরছেন আপনি বাসায়।”

“এক দুদিন লেট হয়, রাস্তায় জ্যাম আর কাজের প্রেসার। তাই বলে আমার বউ আমার সাথে এইভাবে করবে?”

“তো আর কি করবে আপনার বউ? শুনেন, আজকেও যদি দেরিতে আসেন তাহলে রাতে খাবার দিবোনা হু। লেট হলে বাইরে থেকেই খেয়ে আসবেন। আর যদি দেখি খুব বেশি দেরি হইছে তাহলে আপনার বালিশ ড্রয়িং রুমে দিয়ে আসবো, ওখানেই শুয়ে থাকবেন। আমার পাশে এসে শুবেন না।”

“এক্সট্রা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”

“না কোন এক্সট্রা হচ্ছেনা। আপনার শাস্তি পাওয়া উচিত।”

“আচ্ছা আজ আর দেরি করবোনা। সরি।”

এই বলে একটু ভালোবাসাময় চোখে তার দিকে তাকিয়ে রওয়ানা দিলাম অফিসে। কিছুতেই মন বসছে না। কাল রাতে তাকে অনেকটা অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিলাম। এত কাজের চাপে ও যে জেগে ছিলো আমার সেটা খেয়ালেই ছিলোনা। তার উপর ওর দুদিন থেকে জ্বর। আমি না খেলে রাতে খায়না। তাই কাল রাতে খায়নি। আজকে যে বললো, রাতে খাবার দিবে না, গিয়ে দেখা যাবে সেও রাতে খায়নি। জ্বরের অবস্থা কেমন জিজ্ঞেস করতেও পারলাম না। অফিসের কাজের ফাঁকে কখনো কল দেয়না, শুধু মেসেজ করে মিস করলেই। একটা বড় বাসায় সে একা থাকে, আমি থাকি অফিসে তার কিভাবেই বা মন টিকবে। আজ সিদ্ধান্ত নিলাম খুব শীঘ্রই বাসায় ফিরবো।

বিকেলে বসের থেকে ছুটি চেয়ে নিলাম।ও অবশ্যই আমাকে এই সময়ে দেখলে খুশি যতটা হবে তার চাইতে বেশি অবাক হবে।কেননা,এত মাসেও ওকে ভালোভাবে সময় দিতে পারিনি।

বিকেলে বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজালাম। ও এসে দরজার লুকিং গ্লাসে সম্ভবত আমাকে দেখেছি তাই দরজাটা খুলতে একটু সময় নিলো। ও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। তবুও ওর চোখের ভিতর থেকে খুশির চাহনীটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,”জ্বর কমছে?”

“হ্যা। অনেক কমেছে। বিশেষ করে তোমাকে এই সময়ে দেখেই অনেক কমে গেছে।”

আমি তার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যিই জ্বর অনেকটা কমেছে। প্রায় নেই বললেই চলে।

“যাও তাহলে রেডি হয়ে নেও। আমরা বেরুবো।”

“তুমি বেরুবে? তাও আমাকে নিয়ে?”

“হ্যা বেরুবো।”

“আচ্ছা আগে বলো, এত তাড়াতাড়ি এলে যে আজ?”

“তোমাকে মিস করছিলাম। তাই আজ অফিসের বসকে বলে ছুটি নিয়ে চলে আসছি। অনেক দিন তোমাকে সময় নিতে পারিনা ঠিকভাবে।”

“বাব্বাহ..!! আজ সুর্য কোন দিকে উঠছে? আমার জামাই আমার দিকে খেয়াল নেয়া শুরু করলো কবে থেকে?”

“হু। হইছে। অনেক আগে থেকেই নিতাম। আপনি বুঝতে পারেন নাই। এবারে যান রেডি হয়ে নেন।”

ও জানে আমি বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে পারিনা। তাই ওর তৈরি হতে সময় লাগেনি বেশি। আমিও এর মধ্যে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ও সবসময় বোরকা পরে, আর মুখ ঢেকে থাকে। এটাই আমার পছন্দের, সে জানে আজ নীল রঙ্গের বোরকা পরেছে ও। স্কার্ফের মধ্যে দিয়েও ওর চোখটাকে দেখতে দারুন লাগছিলো। আজ আমি ওকে নিয়ে এক সমুদ্রের কাছে যাবো। আমরা সুর্যাস্ত দেখবো একসাথে। এই মুহুর্তটা কখনো কাছে থেকে অনুভব করতে পারিনি আমি। ওকে সময় ই দিতাম না তেমন। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন। ওর “এইযে মিষ্টার”.. এই কথাটুকুতেই জ্ঞান ফিরেছিলো। এতক্ষন ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। ওর হাত ধরে নেমে এলাম বাসার বাইরে। অনেক দিন পরে, এমন সময়ে।

আজ আমারও কেন জানিনা খুব ভালো লাগছে।তাকে। আর সে সাথে থাকলে সবটাই আমার ভালো লাগে। তাই বাসার আশেপাশের সব জায়গাগুলো চেনা স্বত্তেও কেমন যেন আলাদা ভালো লাগছিল। বেরিয়ে এলাম।রিকশায় উঠলা। হুড তুলে দিয়েছি আমি। ও আমার পাশে বসে আছি। অনেকক্ষন ওর দিকে তাকাচ্ছিনা। ইচ্ছে করেই তাকাচ্ছিনা। কারন আমি জানি ও এখন আমাকেই দেখছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সমুদ্রের অনেক আগেই পাকা রাস্তায় রিকশা থামলো। সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। তাকে দেখতে খুশি খুশি লাগছে। তার খুশিই আমার খুশি। সে তাকিয়ে আছে এখনো আমার দিকে। সে এই মুহুর্ত চেয়েছিলো হয়ত অনেক দিন ধরেই।

ভাড়া মিটিয়ে শক্ত করে ওর হাত ধরে সমুদ্রের পাশে একটা গাছের উপরে বসেছি। ও এখনো আমার দিকেই তাকানো। এর সুন্দর জায়গার পরেও ওর মনে হয়ত আমাকেই ঠাঁই দিচ্ছিল। ওর আমাকে ছাড়া এখন মনে হয় কিছুই ভালো লাগছে না। আবারো আমার হাত আরো শক্ত করে ধরলো। সুর্য প্রায় অনেকটা ডুবন্ত। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সমুদ্র স্পর্শ করবে। আলো কমে এসেছে। ও আমার কাঁধে মাথা রাখলো। মাঝে মাঝে আবছা আলোয় ও আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আমাকে বুঝতে দিচ্ছে না যে ও আসলে তাকাচ্ছে। আমিও ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম অনেকবার। ও দেখতে পেয়েছি কিনা জানিনা। তবে মনে হচ্ছিল ও যতবার আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছিলো, ততবারই ও আমার হাতটাকে আরো শক্ত করে আটকে ধরছিলো। সুর্যটা সমুদ্র স্পর্শ করেছে। আর খানিক বাদেই তলিয়ে যাবে। তবুও ও সুর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে। আমি ওই আস্তে আস্তে ডুবে যাওয়া সুর্যের বুকেও ওর চেহারা দেখতে পাচ্ছিলাম। ও আজ অনেক খুশি। ওই সুর্যটার মত করেই খুশি। ওকে দেয়া এ যেন আমার মাত্র কয়েকটা ঘন্টা নয়, এটা ওর কাছে হয়ত ওর জীবনের পাওয়া সবচেয়ে দামী মুহুর্তগুলোর একটি। আমার কাছেও তাই। ওর মতোই!

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: