এ গল্পের নাম নেই

এ গল্পের নাম নেই

অনেকদিন যাবত নিজের ভালোবাসাটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে অবশেষে ক্লান্ত এখন মন। সে চাচ্ছে সেই লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটাকে জাগিয়ে তুলতে। যেটা হয়ত বদলে দিতে পারতো তার প্রতিদিনকার চলতে থাকা অস্বাভাবিক জীবনটাকে। মূহুর্তগুলো অচেতন হয়। জানেনা কি করতে হবে, কি করতে হবে না। তবুও ছুটে যায় ছোট্ট একটা আশায় কারো কাছে। হয়তো একটুখানি ভালোবাসার লোভ কিংবা দিনশেষে একটুখানি ছায়া পাওয়ার আশায়।

সেই দিনটার কথা খেয়াল নেই তার। করাটা জরুরিও না। দিনটার দিনিলিপিটুকু জরুরি। এক বছর আগে মেয়েটাকে ভালোবাসতো সে। হয়ত অনেক। প্রচন্ড। কিংবা অনেকের চাইতেও হয়ত বেশি। ভালোবাসার কি পরিমাণ হয় কখনো? হয়না। ভালোবাসা, ভালোবাসাই। যাকে আমরা ভালোবাসি, তাকে আমরা ভালোবাসি। কতটুকু বাসি সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

যখন ভালোবাসাটা কাজ করতো সেই সময়ে মেয়েটা অন্য কারো ছিলো। প্রথম প্রথম কথা তাদের। নতুন এক অনুভুতির শুরু। যেখানে ছেলেটার ভেতরে সে আবদ্ধ থাকলেও, মেয়েটার ভেতর বসবাস করতো অন্য একটা মানুষ। যেখান থেকে মেয়েটা চাইলেও বুঝতে পারতোনা ছেলেটার ভেতরকার আবেগটুকু। ভালোবাসাটুকু। মেয়েটার জীবনে অন্য কেউ আছে ভেবে থেমে যায় ছেলেটার ভেতরটা। সে ছিটকে সরে আসে অনেকটা দূরে।

তখন থেকে শুরু হয় ভাঙ্গনের গল্প। কেউ তখন সুখে তার নিজের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিয়েছে অন্য কাউকে নিয়ে, আর অন্যদিকে বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে কারো। ফেসবুকে আপলোড দিতে থাকা নিত্যদৈনন্দিনের ছবিগুলো হতাশাই যে কেবল সৃষ্টি করেছিলো এমনটা নয়, বরং ওলোট-পালোট করে দিচ্ছিলো সবকিছুই। কেউ কি বুঝবে প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারো হাত ধরে ঘুরতে থাকা ছবিটা হঠাৎ সামনে এলে কেমন কষ্ট লাগে।

সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছিলোনা মেয়েটার। দিনদিন কষ্ট বেড়ে যাচ্ছিলো তারও। একটা অজানা কারণে প্রেমিকের থেকে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটা। ওইদিকে সে হয়ত জানতোও না যেই ছেলেটার সাথে তার সেভাবে কথাই হয়নি কখনো সে তাকে ভালোবেসে বসে আছে। পৃথিবীটা কত অদ্ভুত। ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোবেসেও পাচ্ছে না, আর মেয়েটা পাচ্ছেনা তার ভালোবাসা যাকে সে ভালোবাসে। দিনগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো ছেলেটার। তবুও সময় কেটে যাচ্ছিলো আস্তে আস্তে। মেয়েটার কষ্টের কথাটুকু কখনো হয়ত বুঝতেও পারেনি সে। অতোটা ঘনিষ্ঠ ছিলোনা তাদের সম্পর্ক তখনো।

প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে টুকটাক কথা হতো আমার আর মেয়েটার। তখনও আমি জানিনা তার ভেতর দিয়ে কি যাচ্ছে। কেবল এতোটুকুই জানতাম তাকে ভীষণ রকমের ভালোবাসি। বলার মতো সাহস ছিলোনা কারণ তার লাইফে কেউ ছিলো। দিনের পরে দিন জ্ঞানের, বুদ্ধির সীমাটা হারিয়ে যাচ্ছিলো কেবল।

একদিনের সময়টা বেশ আমার পক্ষে ছিলো। যেদিন জানতে পারলাম তার লাইফে সেই আগের মানুষটা নেই। তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অনেক দূরে। স্বার্থপরের মতো আমি সেদিন তার কাছে তার হাত চেয়ে বসি। সে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারেনা তার কি করা উচিত। আমি জানতাম তার লাইফে কেউ নেই। কিন্তু সে তার পুরানো মানুষটাকে এখনো অনুভব করে। এখনো মিস করে। ব্যাপারটা কিছুদিন বাদে জানতে পারায় আমার অপরাধবোধ বেড়ে যায়। যেই মেয়েটার লাইফে কেউ নেই, সেটা জানার পরেই আমি তার হাত চেয়ে বসি এটা একটা অন্যায়ের মতো কাজ ছিলো আমার জীবনে। একটা অভিশপ্ত অধ্যায়। যার জন্য আমি কেবল নিজেকেই দায়ী করতাম। অন্য কাউকে না। স্বার্থপরের মতো আচরণ করেছিলাম এটাই মনে হতো বারবার।

বারবার কষ্ট পেতে পেতে আমি হারিয়ে যেতাম। তাই সেবারে সুযোগ পেয়ে হয়ত তার হাত চেয়ে বসেছিলাম। সত্যিটা এটা হলেও অনেকটা অপরাধবোধে তখনও ছেঁয়ে যাচ্ছে আমার ভেতরটা। আমি আমার আগের সেই মানুষটা ছিলাম না, যে চাইলেই নিজের ভালোবাসা প্রতিটা বাক্যে বাক্যে প্রকাশ করার সাহস রাখতো। আমি বদলে গেছি। অনেকটা বদলে গেছি। হয়ত কষ্টে, কিংবা তাকে না পাওয়ার যন্ত্রনায়।

দিনের পরে দিন তাকে পাওয়ার পাগলামোগুলো বেড়ে যাচ্ছিলো। তার সাথে ওই ঘটনার পরে কিছুদিন কথা হয়নি। যখন আমি পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিলো তাকে আমি বলি, “আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।” আর সেই মনে হয়া থেকে আমার তার সাথে কথা বলাটা বেড়ে যেতে থাকে। প্রতিদিন। প্রতিমুহুর্ত। এমনকি অনেক দীর্ঘরাত। যা আমার তার সাথে সুন্দর কিছু মূহুর্তের ছিলো। তার জন্য না হলেও আমার জন্য। কারণ সেই সময়গুলোতে আমি তাকে ভালোবাসি বলার জন্য ক্ষমতা পেতাম।

কিন্তু এভাবে কাছে থেকেও তাকে না পাওয়াটা আমার জন্য কষ্টকর ছিলো। এক বিকেলে আমার তাকে খুব পেতে ইচ্ছে করছিলো। ইচ্ছে করছিলো কল্পনায় হলেও সে আমাকে বলুক সে আমাকে চায়। কল্পনায় বলুক সে আমাকে ভালোবাসে। আর আমি আমার জীবনের সবগুলো কষ্ট উজার করে দেই তার সামনে। তার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলি এক পশলা। পাগলামীর পরিমাণটা থেকে বের হয়াটা সহজতর ছিলোনা।

তাকে প্রশ্ন করলাম, সে কি আমাকে ভালোবাসে? সে কি আমাকে চায়? আমি কি করলে সে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে? প্রশ্নগুলো ভীষণ ভারি ছিলো। অনেকটা। সে উত্তর দিতে চায়নি। তবুও আমি তাকে আমার জীবনের সবকিছুই বলে ফেললাম। তার প্রয়োজনীয়তা। গুরুত্ব। সবকিছু। তার উত্তরগুলোই কেবল আমার পাগলামীগুলো থামাতে পারতো। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়েছিলো তার উত্তরগুলো।

সে আমাকে বললো, হ্যা সে আমাকে ভালোবাসে। সে আমাকে চায়, আবার চায় ও না। সবচেয়ে খুশি হবে যদি আমি আর প্রতিরাতে না কাঁদি, তাকে ভুলে গিয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক, সুখী একটা লাইফ কাটাই। আমি আর কিছু শোনার মতো ক্ষমতায় ছিলাম না । তবুও তার কথামতো তাকে পেলে আমি সুখী হবোনা। ভালো থাকবোনা। এটা আমার সবচেয়ে খারাপ একটা সিদ্ধান্ত হবে।

আমি চুপচাপ সরে এলাম। আর কোন কথাই শুনতে চাইলাম না। ভালোবাসা কি এভাবেই হয়? কেনো কাউকে ভালোবাসলেও এক মুহুর্ত তাকে ছেড়ে দূরে যাওয়া যায় কি? ভালো, খারাপ কিংবা ভাগ্য কেনো ভালোবাসায় আসবে? আমি তাকে চাই এটাই কি যথেষ্ট কারণ নয় তাকে পাওয়ার জন্য? পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতেও একজনকে চেয়ে, একজনকে ভালোবেসেও কেনো একজনকে পাওয়া যাবেনা?

ভালোবাসা কি এমন হয়? যা একটা কারণ দেখিয়ে উপেক্ষা করে ফেলা যায়? নাকি ভালোবাসা এমন হওয়া উচিত, যেখানে হাজারটা কারণ ডিঙ্গিয়ে হলেও একটা কারণ, শুধুমাত্র একটা কারণের জন্য হলেও তার বুকে মাথা রেখে জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়? একটা কারণের জন্য হলেও তার পাশাপাশি থাকা যায়!? জানা নেই। এর উত্তর কারও জানা নেই। হয়ত তারও নেই। তাই সে ভালোবেসেও, চেয়েও দূরে যেতে চাইছে। অনেক দূরে। সে হয়ত ভাবছে সেখানেই আমার সুখ। কিন্তু সে জানেনা, আমার সুখ সে নিজেই।

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: