অহংকার যেভাবে মানুষকে শেষ করে দেয়!

অহংকার যেভাবে মানুষকে শেষ করে দেয়!

একটা সময় আমি একটা গ্রুপে লিখতাম, আমার এক বন্ধুর সাজেশনে। সে বলেছিলো সেখানে আমার লেখাগুলো দিতে, যাতে করে আমার লেখাগুলো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। আস্তে আস্তে সেই গ্রুপের মডারেটরও হয়ে যাই আমি। গ্রুপটা তখন বিশাল বড়। কিছু নিয়ম কানুন দিয়ে দেয়া হয়েছিলো আমাকে গ্রুপের মডারেটর করার সাথে সাথেই। সেসব পালন করেই আমি নিজের কাজগুলো করে যাচ্ছিলাম। দু’দিন পরে, পোষ্ট করতে গিয়ে আমি টের পেলাম আমি আর গ্রুপটার মডারেটর নেই। আমাকে মডারেটরের জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই সময়ে যেই ভাই এডমিন তাকে আমি মেসেজ দেই, এবং যথাযথ কারণ জানতে চাই আমাকে সরিয়ে দেয়ার। দুইদিনে কি এমন ভুল করলাম সেটাও জানাটা জরুরি ছিলো এবং সবচেয়ে জরুরি ছিলো জানাটা যে না বলে একটা মানুষকে তার জায়গা থেকে হুট করে সরিয়ে দেয়াটা কিরকম ভদ্রতা। সে ভনিতা করতে লাগলো। কোনো পর্যাপ্ত উত্তর না দিতে পেরে মেসেজগুলো ইগনোর করতে থাকলো। আমি তাকে সর্বশেষ মেসেজ দেই একটাই, “কাউকে কারণ না দেখিয়ে এবং না বলে সরিয়ে দেয়াটা একটা অভদ্রতা। ভালো থাকবেন” এরপরে আর তার সাথে আমার কখনোই কথা হয়নি৷ এবং আমি সাথে সাথেই গ্রুপটা থেকে লিভ নিয়ে নেই।

প্রথমত, একটা গ্রুপ যেটা খুবই বিশাল সংখ্যক মানুষ নিয়ে গঠিত, সেটার এডমিনের এমন আনপ্রফেশনালিজম খুবই বাজে লেগেছিলো আমার। এবং লেখালিখির একটা গ্রুপে প্রতিদিন একটা দুইটা পোষ্ট মডারেটররা করতে পারবে এরকম রুলস খুবই অযৌক্তিক। একটা গ্রুপে লেখা দিয়ে মানুষ নিজের এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করতে যায়, যায় নিজেকে যাচাই করে নিতে। সে কতো ভালো নিজের স্টোরিটেলিং করতে পারে সেটা যাচাই করতে। ওইদিকে এরকম কিছু এডমিনেরা বরাবরই নিজেদের বিশাল গ্রুপ থাকার ফায়দাগুলো লুটেপুটে নেয়।

দ্বিতীয়ত, একজন লেখকের কোনো গ্রুপেরই কখনো প্রয়োজন হয়না লেখালিখি প্রাকটিস করার জন্য। সে নিজের ব্যক্তিগত আইডি, কোনো ওয়েবসাইট, এমনকি কোনোরকম পাবলিক ডোমেইনে কিছু পোষ্ট করা ছাড়াই নিজেকে যাচাই করে নিতে পারে। তবুও যখন একটা গ্রুপে সে এড হয়, কিছু এক্সপেক্টেশন তার থাকেই। সেই এক্সপেক্টেশন নষ্ট করার অধিকার গ্রুপের কোনো এডমিনদেরই নেই।

সবশেষে, সেই গ্রুপটা চলেছিলো সম্ভবত আর কয়েক মাস। এরপরে শুরু হলো বিশাল হা-হুতাশ। সবই টের পাচ্ছিলাম আমি। আস্তে আস্তে এতো বিশাল গ্রুপটা ধসে পড়লো। আজেবাজে পোষ্টে ভরে উঠলো। গ্রুপটা হ্যাক করেছিলো সম্ভবত কোনো বিদেশী অর্গানাইজেশন৷ তারা আর কখনোই গ্রুপটাকে ফিরিয়ে দেয়নি, যতটুকু জানি। সেই গ্রুপের ওই এডমিনটাকে আজও আমার খুব মনে পড়ে। তার ব্যবহার মনে পড়ে। হয়তো তার প্রাপ্য এটাই ছিলো, ক্ষমতার অপব্যবহারে তার নিয়তি তাকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটা হয়তো সেও কখনো জানেনি বা বোঝেনি। ওইদিকে ওই গ্রুপ ছাড়ার পরে আমার দু’টো বই এসেছে। আমি এখনো সেই একই আইডিতে, সেই একই জায়গায় আছি এবং বেশ ভালো আছি। অথচ, তার নিয়তি? ক্ষমতার বড়াই সম্ভবত সেই ক্ষমতাটাকে শেষের দিকেই নিয়ে যায়, সেটাই হয়েছিলো তার সাথে।

অথচ, খুব কম মানুষই জানে এরকম বড়াই না দেখিয়ে চলতে থাকা এই মানুষটার ১ মিলিয়ন সদস্যেরও বেশি বড় একটা পেইজ আছে। দাপিয়ে না বেড়ানোতেই হয়তো রয়ে গিয়েছে সবটা, আর আমি আছি আমার জায়গাতেই। আফসোস হয় খুব এদের জন্য। এরা কবে বুঝবে ক্ষমতার বড়াই থাকেনা, এরা কবে বুঝবে মানুষের প্রতি তাদের আচরণ এরকম হলে তাদের শেষ অনিবার্য?

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: