কেমন গেলো আমার ২০২৩?
শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp

কেমন গেলো আমার ২০২৩?

২০২৩ সালটা খুব বেশি একটা ভালো যায়নি আমার। বরং, গত কয়েকবছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময় যাওয়া বছরগুলোর একটাতে নিঃসন্দেহে জায়গা করে নেবে ২০২৩! পছন্দের সবগুলো কাজ থেকে দূরে ছিলাম প্রায় বহুদিন। এখনো আছি! তার মধ্যে লেখালিখি এবং বই পড়ার মতো প্রিয় দুটি কাজ থাকবে। তারপরেই থাকবে মুভি বা সিরিজ দেখা থেকে দূরে থাকা (যদিও এটার চাইতে উপরের দুটো আরো বেশি প্রিয় আমার)। এগুলোর থেকে দূরে থাকার কারণ যদি বলতে হয়, সেটা একাডেমিক প্রেসার, পারিবারিক কিছু সমস্যা ফেইস করা, মেন্টালি ডিস্টার্বড হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, কোনো কিছুতে খুব বেশি পরিশ্রম দিয়েও সেটাতে ভালো ফল না পাওয়ার উপর বর্তায়। এসব বলার কারণ হচ্ছে, এরকম বহু টুকিটাকি জিনিস আমাকে সবকিছু থেকে দূরে রেখেছে। সবগুলোরই পেছনের কিছু না কিছু লিখে রাখবো এখানে, যাতে সামনের দিনগুলোতে এগুলো আমাকে এই ভুলগুলো আবার করতে বাধা দেয়৷

এই বছরটার শুরু থেকেই আমি একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। যেখানে আমার কিছু না পাওয়া জিনিসকে আমি লিস্টে রেখেছিলাম, যা আমি অর্জন করতে চেয়েছি। যা পেতে চেয়েছি নিজের করে। কিছুই পাইনি! পাওয়ার জায়গাটা থেকে অনেক অনেক দূরেই আমার অবস্থান ছিলো পুরো বছর জুড়ে। জানুয়ারিতে লিট ফেস্ট দিয়ে শুরু আমার লিখে রাখার মতো জার্নি। ওহ হ্যা, বছরের শুরুর দিনটাই শুরু করেছিলাম আমার প্রিয় লেখকের বই (অগোচরা) পড়া দিয়ে এবং যথারীতি তার বই (কসমোজাহি) দিয়ে শুরু হবে আগামী বছরটাও। যদিও তার বই বের হওয়ার সাথে সাথেই পড়ে ফেলার আগ্রহ থাকে সবসময়, তবে উপরের সেই কারণগুলো আমার পথে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ালো! তো এবার লিট ফেস্টে ফেরত আসা যাক! লিট ফেস্টে কিছু পরিচিত লেখকদের সাথে দেখা হলো আমার। তন্মধ্যে আমার প্রিয় লেখকও ছিলেন! এরপরে ফেব্রুয়ারীর পুরো বইমেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো তো অন্যতম প্রাপ্তি ছিলো আমার। পেয়েছি কিছু প্রিয় লেখকদের পাশে থাকার সুযোগ, তাদের সাথে আড্ডা দেয়ার সু্যোগ, তাদের পাশে বসে চা-কফি খাওয়ার সুযোগ। কিছু প্রকাশক, কিছু না দেখা হওয়া পরিচিত মানুষদের সাথে সাক্ষাত থেকে শুরু করে বহু কিছুই ছিলো এই এক মাসে আমার প্রাপ্তি। মাস শেষে, অনেকগুলো বই হয়েছিলো আমার সঙ্গী। আর পুরো মেলার স্মৃতি! পেয়েছি দুজন খুবই কাছের মানুষ, যারা এখন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সময় সুযোগ পেলে, এখনো তাদের সাথেই আড্ডা আমার। এর গন্ডির বাইরে বের হতে চাইনি কখনোই। কারণ, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো আমার সবাইকে, যেটার কোনো সঠিক উত্তর আমার কাছে ছিলোইনা। লিখিনা কেনো? লিখবো কবে? কি আমাকে আটকাচ্ছে? এইসব উত্তরের ভয়ে কোথাও পা রাখার সাহসটুকুও করতাম না। মেলা যাওয়ার পরে মায়ের অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা আমাকে প্রচন্ডভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিলো। সেই থেকেই আমার এই মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকার শুরু!

রমজানের প্রায় শেষের দিকে আমার বাসায় যাওয়ার কথা সেদিন। লঞ্চের টিকিটও কাটা আছে। জ্যাম হবে ভেবে আমি ২ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। হঠাৎই বাসা থেকে চাচার ফোন আসে। আমার মা অসুস্থ! হাসপাতালে ভর্তি! তার একটাপাশ পুরোপুরি অচল হয়ে আছে! আমি যেনো এখনই, বাস ধরে বাসায় চলে যাই! আমার সাথে ছিলেন আমার ফুপু-ফুপাও। আমার ইচ্ছে ছিলো তাদেরকে লঞ্চে পৌঁছে দিয়ে, আমি বাস ধরবো। কিন্তু তারাও আমার সাথে যেতে চাইলেন। এক প্রকার জোর করেই! “এখনই বাস ধরে বাসায় চলে যাই?” কথাটা ঠিক হজম হলোনা আমার। আমার পরিবারের সবাই জানেন, আমি মেন্টালি কতোটা উইক! তাই এসব বলে আমাকে থামাতে চাইছেন হয়তো, যাতে আমি ভেঙ্গে না পরি! এমনটাই ভাবতে লাগলাম আমি। মনে হলো, আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। আমি আবারও ফোন করলাম, আমার বোনকে চাইলাম। ওর মিথ্যে আমি ধরতে পারি। তবে ওর সাথে কথা বলে আমি বুঝলাম ও মিথ্যে বলছে না। আমি আম্মুর কাছে চাইলাম। তার সাথে কথা বললাম। একটু শান্ত লাগলো নিজেকে। পুরোটা তাও হতে পারছিলাম না। বাসে বসেই আজান দিলো মাগরিবের। সারাদিন প্রচন্ড গরমে রোজা রাখার পরে আমি একফোঁটা পানিও যে খাবো, সেই ইচ্ছেটুকুও আমার ছিলো না। আমি যখন বরিশালে গিয়ে, কেবিন রুমে পা বাড়াই, আমার মা সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন। নিজেকে কি পরিমাণ অসহায় লাগছিলো বোঝাতে পারবোনা। যারা এরকম পরিস্থিতিতে পরেছেন, তারা ঠিকই জেনে থাকবেন। এরপরের দিন আম্মুকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলাম, এখানে তার চিকিৎসা হলো এবং সে আগের চেয়ে সুস্থ বোধ করছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, সে অনেক দ্রুত রিকোভার করেছেন, যেটা আমাদের সবার কল্পনার বাইরে ছিলো। তবে মায়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে আমি সেইবার বুঝে গিয়েছিলাম, আমার কি করতে হবে, কি কি ধরতে হবে, কি কি ছাড়তে হবে, এবং আমার জন্য করণীয় কি! আমি সেই পথে হাঁটা ধরলাম। যদিও নিজের প্রিয় কাজগুলোকে ছেড়ে দেয়ার কাছে এই বিষয়টা একদমই সামান্য মনে হতে পারে, তবে আমার বিন্দুমাত্র রিগ্রেট নেই এই সিদ্ধান্তে। সেটা কখনো হবেও না। নিজের জন্য না হোক, অন্তত আমার মায়ের জন্য হলেও আমার জীবনটা গুছিয়ে নিতেই হবে। আমি সব থামিয়ে নিজের জীবনের দিকে তাকাতে শুরু করলাম, বাদ দিতে শুরু করলাম, নিজের জীবনের সবকিছু। শুধু আমার প্রিয় মানুষগুলোকে জিতিতে দিতে।

যদিও সেটুকু করতে গিয়ে মুখ লুকিয়ে চলতে হয়েছে অনেক, ওই প্রশ্নগুলোর ভয়েই। আবারও সেই একটাই কথা, জানি আমি উত্তর দিতে পারবোনা। মানুষ হাসবে, কারণ তাদের কাছে লজিক্যাল লাগবে না। কিন্তু ভেতর থেকে আমি কি নিয়ে ডিটারমাইন্ড ছিলাম, কেবল আমিই জানি। অনেকের সাথে কথা বলতে একটা ভয় কাজ করতো। আমার মনে হয়, প্রতিটা মানুষই জাজড হতে ভয় পায়, আমিও তেমনই। কিছু জায়গা, কিছু মানুষ, আর কিছু বাস্তবতা এড়িয়ে যেতে চেয়েছি। বিষয়টা এমন না, তাদের আশেপাশে যেতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে, আসল বিষয়টা আমার ভয়। আমার মনে হয়, তাদের আশেপাশে থাকলেই আমি বরং আরও খুশি থাকি এবং থাকবোও। তবুও এই বিড়ম্বনা বলার মতো নয়। একাডেমিক বিষয়ের পিছনে দৌড়ে দৌড়েও শেষটা সুবিধার হলো না। ব্যাটে বলে মিললোও না। বারবার তারিখ পরিবর্তন হওয়াতে কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতেই পারছিলাম না আমি। যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো আর এক পা এগোলেই সামনে দাঁড়িয়ে আছে ব্যর্থতা। আমি তবুও সবকিছু মিলিয়ে চলার চেষ্টায় ছিলাম। সেখানেও ব্যর্থ। একাডেমিক দিকে এতোটা সময় ব্যয় করার পরেও আমার ফলাফল ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। যেই ভয়টাই আমি করছিলাম! তবে টের পাচ্ছিলাম, সবকিছু থেকে ছিটকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম আমি। কিছু চাইলেও আঁকড়ে ধরে থাকার মতো নেই। সবদিক থেকেই আমার বিপদ আসন্ন। ঘোল পাকিয়ে ফেলায়, সবদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। এবং আমার জীবনের এই নাটকীয়তায়, আমি ছিলাম কেবলই একজন নিরব দর্শক। যার কিছু করার ছিলো না!

কিছু মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে লাগলো, না চাইতেই। বছরের শুরুতে যেই সম্পর্ক ছিলো মজবুত, টাটকা এবং শক্তিশালী, বছর শেষ হতে না হতেই সেগুলো যেনো ভঙ্গুর হতে শুরু করলো। সবসময় একটা লাইন শুনতাম, ‘’কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর!” আসলেই তাই। আপনি আপনার প্রিয় মানুষদের যত কাছে যাবেন, বা তারা আপনার যত কাছে ঘেষবে, ততই একে অন্যের খুঁটিনাটি ভুলত্রুটিগুলো দেখতে পাবেন। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে, দূরে থাকার বিকল্প নেই বোধহয়। তবে মানুষ মাত্রই আমরা চাই কাছে ঘেষতে, তাই নয় কি? তাদের হয়তো, আচার-আচরণ থেকে শুরু করে মেন্টালিটিকে চিপ লাগা, আমাকে ছোট মনে হওয়া, অনেক কিছুই হয়েছে। তাদের জীবনের না পাওয়ার গল্পে হয়তো, “কারণটা আমি ছিলাম” ধরে নেয়া হয়ে গিয়েছে। আসলেও কি তাই ছিলাম? আসলেও কি তাদের কোনো কিছু না পাওয়ার পিছনে আমার হাত ছিলো? আসলেও কি আমি চেয়েছি, তারা হারাতে থাকুক? নাকি আমি সৎ ছিলাম? নিজের প্রতি? আমার চাহিদার প্রতি? যেটা আমাকে তাদের কাছে নিচু মানসিকতার বানিয়েছে দিনের পর দিন? ইচ্ছাকৃত ছিলো কিছু? মনে তো হয় না! আমি সৎ ছিলাম। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগার বিষয়ে। মানুষের ভালো লাগা, খারাপ লাগার সংজ্ঞা একেকজনের জন্য আলাদা, তাই না? তাদের কাছে আমার খারাপ লাগাটাকে ভালো মনে হলে, সেটা কি আসলেও আমার দোষ? একদমই না! আমার খারাপ লাগাটা আমারই। আমার খারাপ লাগে মানে, কারো কাছে ভালো লাগতে পারবে না এমনটা একদমই না। তবে তাই বলে, আমি নিশ্চয়ই নিজের মতামত জাহির করার জন্য খারাপও হয়ে যাইনা। অপরাধী হয়ে যাইনা। তাইনা? তবুও এই সমস্ত ক্ষেত্রে নিজের উপর ব্লেইম চাপিয়ে নেয়াটাই শ্রেয়। অন্তত, কারো উপর আমাকে আমার মতো না মেনে নেওয়ার কারণে দোষ বর্তায় না। তাই ভেতরে ভেতরে সেই ক্ষোভ কারো উপরে না থাকায় নিজেকে হালকাই লাগে বেশ।

এই বছরে পেয়েছি বহু শিক্ষা। সেই জিনিসগুলো অল্প অল্প করে লিখে না রাখলে বোধহয়, সামনের দিনগুলো একই ভুল আবার করে বসবো। তাই লিখতে হবেই। একঃ কিছু মানুষ হুট করেই আপনার প্রিয় হতে যেতে পারে। আপনি বুঝবেনও না কখন তারা আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে যাবে। তারাও জানবেনা, যে তারা ঠিক কিভাবে আপনার এতোটা কাছে চলে এলো! তারা আপনাকে সাহায্য করবে, বিপদ থেকে মাঝে মাঝে উদ্ধারও করবে। চেষ্টা করবে আপনাকে ভালো রাখার। অন্তত যতটুকু তাদের পক্ষে সম্ভব। দুইঃ আজ যার সাথে আপনার খুব ভালো সম্পর্ক, তারা সারাজীবনই একই রকমের থাকবে, একই রকমের এটেনশন দিবে, একই রকমের আগ্রহ দেখাবে কথা বলতে গেলেই এটা একটা মিথ। এটা কখনোই সম্ভব না। সিনেমায়, বা লেখায় এরকমটা বানিয়ে নেয়াই যায়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আজ যারা আপনার প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছে, ধীরে ধীরে আপনার কাছের একটা মানুষ হয়ে উঠেছে, কাল তারা আপনাকে অন্য চোখে দেখবে। তাদের জীবনের বহু ক্ষতির জন্য আপনাকে দায়ী হিসেবে ধরে নিবে। আপনার অনুভুতি কিংবা আপনার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে তাদের কাছে “টিপিকাল”, “ সিলি” ইত্যাদি লাগবে। তাদের মনে হবে, আপনি একটা নিচু মানসিকতার মানুষ। আপনার চিন্তা-ভাবনা, দুনিয়াকে দেখার চোখ, ইত্যাদি সমস্ত জায়গায় তারা ভুল খুঁজে পাবে। এবং আপনার কোনো খারাপ লাগাই তাদের কাছে জাস্টিফাইড হবে না। মোট কথা, তাদের কাছে আপনি দিনশেষে একটা খারাপ মানুষ হয়ে যাবেন। অথচ, শুরুর দিকে, তারা আপনাকে ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করতে পর্যন্ত পারতো না। এমনকি আপনিও না। তিনঃ না চাইতেও কিছু জায়গা থেকে আপনার দূরে সরে যেতে হবে। দেখবেন আপনার প্রায়োরিটি জায়গাটাতে কম। প্রথম দিকের মতো তো একদমই নেই। আপনি জানেনও না তারা কি প্রায়োটাইজ করে এখন। যেই জায়গাটাতে তাদের জীবনে আপনি ছিলেন, সেই জায়গাটাতে নিজেকে আর খুঁজে পাবেন না। শুধুমাত্র, আপনি আপনার নিজস্বতার কারণে তাদের চোখে বিষাক্ত হয়ে যাবেন। চারঃ অনেক মানুষকে আপনার কাছের মনে হতে পারে, তাদেরকে আপনার আপন মনে হতে পারে, এমনকি তারা সত্যি সত্যিই আপনার আপন হয়েও থাকতে পারে, তবুও নিজের মন খারাপ কিংবা নিজের ভেতরকার যন্ত্রণাগুলো সবকিছু তাদেরকে বলতে গেলে দিনশেষে আপনি একটা লাফাঙ্গা হয়ে যাবেন। আবারও, একই রকম ভাবে তাদের কাছে বিষয়গুলো জাস্টিফাইড হবে না, এবং তারা যথাযথ কোনো কারণ খুঁজে পাবে না, তাই তাদের কাছে আপনার শেয়ার করা বিষয়গুলো অতি সামান্য লাগতে পারে। যেটা আসলে আপনার জন্য এবং আপনার জীবনে অনেক বড় একটা বিষয়। তাদের কাছে সিলি হওয়া বিষয়টা আপনাকে ভীষণ রকমের কষ্ট দেয়। নিজের কষ্ট এবং মানসিক যন্ত্রণাগুলো একটু বুঝে শুনে শেয়ার না করতে জানলে, আপনি সামনের দিনগুলোতে অনেক বেশি যন্ত্রণায় থাকবেন। পূর্বের তুলনায় আরও আরও বেশি। যেই জিনিসটা আপনি কারো কাছে কখনো এক্সপ্লেইন করতে পারবেন না। কারণ, আপনার মন খারাপ কেনো হয়, সেটা অনেকেই শুনবে ঠিকই, কিন্তু বুঝতে চাইবেনা। জানতে চাইবেনা এসবের পিছনের ঘটনাগুলো। পাঁচঃ যদি কোনো কিছু আপনাকে ভেতর থেকে শান্তি না দিয়ে থাকে, তবে সেই জিনিসটা আপনার জন্য ক্ষতিকর এবং সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। কেউ সেটাকে কিভাবে দেখে কিংবা আপনার জন্য ক্ষতিকর হওয়া জিনিসটাকে অন্য কেউ ভালো চোখে দেখে কিনা, সেটার জন্য নিজেকে জাজ করতে যাবেন না। আপনি আমিত্ব তো হারিয়ে ফেলবেনই, সাথে সাথে হারিয়ে ফেলবেন আপনার স্বত্ত্বা, আত্মা এবং পুরো আপনাকেই। আপনার কষ্ট পাওয়ার কারণ, অন্যের কাছে আপনার ‘টিপিক্যাল/চিপ মেন্টালিটি’ প্রকাশ করতে পারে, কখনো কখনো আপনাকে ‘টক্সিক’ও মনে হতে পারে, তবে মনে রাখবেন, আপনার জন্য আপনার কষ্টটাই বড়। আপনি কষ্ট পাচ্ছেন তো পাচ্ছেন, এটার উপর অন্য কারো ভাবনা প্রভাব ফেলা মানে, আপনি তাদের মতো করে ভাবতে শুরু করলেন। যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তা কেনো দেয় কিংবা এটার পেছনে লজিক খুঁজতে যাবেন না। অন্য মানুষ আপনার এই কষ্ট পাওয়াটাকে সিলি বানিয়ে দিলেও, নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তা শুধুই আপনার জন্য দুঃস্বপ্ন এবং আঘাত। সুতরাং, সেটাকে অন্যের জন্য জাস্টিফাইড করতে যাওয়ার মানেই হয়না। বরং, কেউ সেটাকে চিপ, টিপিকাল, সিলি ভেবে থাকলে মুচকি হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। কারণ তখন মনে রাখবেন, তারা আপনি হয়ে আপনার জীবনটা বেঁচে দেখেনি। তাদের কাছে যেটা সিলি, সেটা আপনার জন্য হাজার রাত নির্ঘুম থাকার কারণ হতে পারে। সুতরাং, কারো কাছে সিলি লাগলেও নিজেকে জাস্টিফাইড করতে গিয়ে ছোট করবেন না। এতে আপনার কষ্ট কমবে না, বরং ওই মানুষগুলো আপনাকে আরও নানান রকমের ট্যাগ লাগিয়ে দিতে পারে। যেগুলো হয়তো আপনি আরও নিতে পারবেন না। ছয়ঃ কেউ যদি আপনার সামনে অন্য কারো প্রশংসা করে, সেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আপনি সুন্দরভাবে মেনে নিতে শিখুন। তবে যদি আপনার বিন্দুমাত্র মনে হয়ে থাকে, যে অন্য কাউকে আপনার সামনে প্রশংসা করার কারণে বা ‘ট্যালেন্টেড’ দাবি করার কারণে, আপনি ছোট হয়ে যাচ্ছেন, তাহলে সেটাকে ওভারলুক করবেন না। টেইক ইট পার্সোনালি। আপনার সামনে অন্যের প্রশংসা করা মানুষটা, আপনাকে ওভারলুক করে গেলে সেই বিষয়টা খেয়াল রাখতে চেষ্টা করুন। যে মানুষটা আপনার সামনে বসে অন্যের প্রশংসা নিয়ে ব্যস্ত, সে আপনার কোনো ট্যালেন্ট কিংবা কাজকে যদি ওভারলুক করে যায়, এটা লং রানে অনেক সমস্যার। এবং এই জিনিসটা সামনের দিনগুলোতে আপনাকে বাজেভাবে আঘাত করতে পারে। তাই যারা আপনাকে আপনার মতো দেখতে পারে, বুঝতে পারে, তাদের সাথেই একটা দীর্ঘ সময় চলার স্বপ্ন আপনি দেখতে পারেন। নয়ত, কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আবারও আঘাত পেতে পারেন। সাতঃ কোনো একটা আড্ডাতে গেলে আর দুই-চারজনের মতো আপনি প্রায়োরিটি পাচ্ছেন কিনা খেয়াল রাখবেন। মনে রাখবেন, আড্ডার চাইতে বেশি প্রয়োজনীয় আপনার সেল্ফ রেসপেক্ট। সেই জিনিসটা কোথাও গিয়ে হারিয়ে গেলে, সেই আড্ডায় আপনি একট থার্ড পার্সন কিংবা আউটসাইডার হয়েই থাকবেন, এর বেশি কিছু না। তবে একটা আড্ডায় অনেক মানুষ থাকতে পারে, সবাইকে সবাই ঠিকভাবে সময় কিংবা প্রায়োরিটি দিতে পারবে এমনটা ভাবাটা বা আশা করাটা ভুল। সেক্ষেত্রে, তাদের আপনাকে প্রায়োরিটি দেয়ার চেষ্টাটুকু বুঝে নিতে হবে আপনাকে। যদি দেখেন সেই চেষ্টাটুকু তাদের ভেতরে নেই। এভোয়েড করুন। প্রয়োজনে একাই থাকুন। হাজারের মধ্যেও কারা আপনাকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে, তাদের আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করুন। প্রতিটা মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। এইসবের পরেও কারা আপনার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার দিচ্ছে কিংবা আপনার জন্য আলাদা সময় বরাদ্ধ রাখছে, তাদেরকে আগলে রাখুন। শক্ত করে জীবনের চলার পথে তাদেরকে রেখে দিন। আটঃ উপরের কয়েকটা পয়েন্টের সাথে মিল আছে। কিন্তু তবুও, নিজের আবেগ, ভালোবাসা, সময়, প্রায়োরিটি ইত্যাদি প্রকাশের জায়গাগুলোতে সতর্ক থাকুন। কে আপনাকে আপনার সবকিছু শুনে জাজ করছে, আর কে আপনাকে সামলাচ্ছে দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। অবশ্যই, নিজেকে এমন জায়গায় কখনো ফেলবেন না, যেখানে প্রতিনিয়ত, আপনি শুধুমাত্র আপনি থাকার কারণে তাদের চোখে খারাপ কেউ হয়ে উঠছেন। তারা আপনাকে বুঝতে পারছেনা, কিংবা বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করছেনা, এরকম অবস্থায় মানুষগুলো আপনার প্রিয় হয়ে থাকলেও বুঝে নিবেন, এই প্রিয় মানুষগুলোর চোখে একটা সময় বিষাক্ত হয়ে যেতে আপনার সময় লাগবেনা। সুতরাং, সাবধান হোন। যারা আপনার পয়েন্ট অফ ভিউটা বোঝার চেষ্টা করে তাদেরকে সবসময়ই আগলে রাখুন। যারা আগেই জাজ করে না ফেলে, আপনার পেছনের ঘটনাগুলো শুনতে চায় কিংবা আপনাকে আরও ভালো ভাবে জানতে চায়, আপনার সবকিছু শুনার জন্য তৈরি রাখে নিজেকে, আপনি ভালো হোন, খারাপ হোক, সবকিছু যাদের কাছে জাস্টিফাইড, তাদেরকে সবসময়ই আগলে রাখুন। এই মানুষগুলোর আজকাল বড্ড অভাব। আজকাল তো, আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে গেলে হাজারবার আপনাকে জানান দিতে হবে, যে অমুক হয়েছে, তমুক হয়েছে। ঠিক এইরকম সময়ে এসে ওই মানুষগুলো মহামুল্যবান। সবসময় মনে রাখবেন, আপনার জীবনে পা রাখা প্রত্যেকটা মানুষ, সারাজীবন থাকার জন্য আপনার জীবনে আসেনা। কেউ কেউ আসে, শুধু আপনাকে একটা শিক্ষা দিয়ে যেতে। আবার কেউ কেউ আসে সারাজীবন আগলে রাখতে। কাদের সাথে থেকে আপনি নিজেকে ভালো রাখবেন, সেটা আপনার হাতেই। নয়ঃ নিজেকে নিয়ে সবসময় সৎ থাকবেন। কখনোই নিজেকে অন্য কারো ভাবনার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। নিজের চিন্তা-ভাবনা, কষ্ট, দুঃখ, একদম কোনো কিছুকেই জাস্টিফাইড করবেন না। আপনি এমন তো এমনই, কারো ভালো নাই লাগতে পারে। সে আপসাইড ডাউন হতে পারে। তাই বলে আপনি কোনোভাবেই এসব চিন্তাভাবনা বহন করেন বলে খারাপ হয়ে যাচ্ছেন না। আবার সেই মানুষটাও উল্টো চিন্তাধারা বহন করে বলে খারাপ হয়ে যাচ্ছেনা। প্রত্যেকটা মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবেশ, পরিবার সবকিছু আলাদা। সুতরাং, আপনি আপনার ধারণা বহন করেই বলে সেটাই খারাপ, বা অন্য কেউ ট্যাগ লাগিয়ে দিলেই সেটা খারাপ, এমনটা মোটেও না। আপনি যদি আপনার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সৎ থাকেন, এবং আপনার কাছে যথেষ্ট ভ্যালিড কারণ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই অন্য কারো মতামত নিজের উপর চাপিয়ে নেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার এই ভাবনাই আপনাকে আর চার-পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা করে। দশঃ সবসময়ই যে মানুষের আপনার জন্য স্যাক্রিফাইস করতে হবে এই জিনিসটা ভাবা বন্ধ করুন। কেউ আপনার জন্য ১% করলে, তার জন্য ১০% করতে তৈরি থাকুন। একপাক্ষিক স্যাক্রিফাইস করাতে গিয়ে যদি, আপনি তার জন্য কিছু না করতে পারেন, মানুষ হিসেবে আপনি একদমই শুন্য হয়ে যাবেন। কেউ আপনার জন্য যদি একটু সময় রাখে, তার জন্যেও আপনার দিনের মধ্যে কিছু সময় রাখা উচিত। কেউ যদি আপনার জন্য ১টা কাজ করে, একটু চেষ্টা করে, তার জন্য আপনার ১০টা কাজ করা উচিত। সুতরাং, কেউ করেই যাবে আপনার জন্য, আপনি কিছুই করবেন না, তাদের জন্য ভাববেন না, তাদের জন্য সময় বের করবেন না, প্রায়োরিটি লিস্টে রাখবেন না এই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি কারো থেকে ডিসার্ভ করলে, অন্য কেউও ডিসার্ভ করে। যে যেটা ডিসার্ভ করে তাকে সেটা দিতে শিখুন। সে আগলে রাখলে, তাকে আরও দ্বিগুন শক্তি দিয়ে আগলে রাখুন। মানুষের সিচুয়েশন বোঝার চেষ্টা করুন, তাদের ইফোর্টকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। তাদের মানসিক অবস্থা, তাদের চিন্তাধারণার মূল্য দিতে শিখুন। এক্ষেত্রে কেউ আপনারটা না বুঝে আপনাকে জাজ করলেও, তাকে তার মতো বুঝতে পারার চেষ্টা করুন। আপনাকে কেউ হয়ত আপনার মতো মেনে নিতে পারবেনা, তবে তার জীবনে আপনি তাকে তার মতো মেনে নেওয়ার মানুষ হয়ে উঠুন।

২০২৩ সালে এমন অনেক কিছুই আছে যেটার কারণে আমি খুশি। সেই জিনিসগুলোও বলাটা জরুরি। সময় গড়ালে যখন মেমোরিস-এ দিনটা আসবে, তখন নস্টালজিক হয়ে স্মরণ করা যাবে এসব কিছু। প্রথমত, আমার মায়ের দ্রুত রিকোভার হওয়াটা আমার জন্য ভীষণ জরুরি ছিলো। সেটা হয়েছেও। বরং, সময়ের বহু আগে হয়েছে। এই কারণে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। কিছু মানুষের সাথে পরিচয়, যেগুলো আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বইমেলা জুড়ে কিংবা বইমেলার আগে যেসব লেখকদের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে, তাদের সাক্ষাত বা তাদের সাথে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছেটা আমার বহু আগে থেকেই ছিলো, সেটা পূরণ হয়েছে। বরাবরের মতো শিখতে পেরেছি অনেক কিছুই। কাজে লাগাতে হয়তো পারিনি সেই শিক্ষাগুলো, তবে সামনের দিনগুলোতে পারবো এই আশা রাখছি। এই বছরটাতে নিজের কাছের মানুষদের বিপদে-আপদে পাশে থাকতে পেরেছি। তাদেরকে নিজের সেরাটা দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। ফলাফল ভালো না আসলেও শিখেছি ধৈর্য্য ধরে পড়াশুনা করা। ব্যক্তিগত জীবনেও শিখেছি ধৈর্য্য ধরতে। কিছু জিনিস স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে শিখেছি। অনেক ভারী জিনিসকে হালকাভাবে মেনে নিতে শিখেছি। নিজেকে চিনেছি। নিজে কি করতে পারি সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। এগুলোই হয়তো এবছরে খুশি হওয়ার মতো কিছু কারণ।

পরের বছরেও এবছরের মতো বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখতে চাই, যদিও সেটা পূরণ হবে কিনা সেটা সময়ের হাতে। তবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে যেতে চাই আমার লক্ষ্য পূরণে। সেটার মধ্যে প্রথমেই আসবে নিজেকে সময় দেওয়া। দুনিয়ার কোলাহল এবং সবকিছুর ব্যস্ততায় নিজেকে একটু সময় দেয়ার চেষ্টা করবো। নিজেকে অল্প সময়ের জন্য হলেও, নিজে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। এবছরে মোট সম্ভবত ১০/১২টা বই পড়তে পেরেছি, এই সংখ্যাটা বাড়াতে চাই। অন্তত ৩০টা বই পড়তে চাই আগামী বছরে। পড়তে পড়তে শিখতে চাই বহু কিছু। হোক ফিকশন বা নন-ফিকশন, তবে এই অভ্যাসটা আরও বাড়াতে চাই। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেয়া এবছর অনেক কমিয়ে ফেলেছি, আরও কমিয়ে ফেলতে চাই আগামী বছর। টুকটাক কিছু ভালো স্কিল ঝালাই এবং আরও কিছু নতুন স্কিল শিখতে চাই। লেখালিখিতে সময় দিতে চাই। বই প্রকাশ করার চাইতে বেশি, নিজের লেখালিখিতে নিজেকে স্যাটিস্ফাইড দেখতে চাই। আয়ত্তে রাখতে চাই লেখালিখি। গল্প বলার বিভিন্ন ধরণ শিখতে চাই। নিজে পুরোটা আত্মতৃপ্তি পেলে তারপরে প্রকাশের চিন্তা, এর আগের কাজ শুধু পড়ে যাওয়া, লিখে যাওয়া এবং শিখে যাওয়া। ফেসবুকেও টুকটাক লিখতে চাই, সেটা হোক নিজের মতামত কিংবা ধারণা। অন্য কারো কথা মাথায় না এনে নিশ্চিন্তে প্রকাশ করে যেতে চাই আমার মতামত, বক্তব্য। ইউটিউব চ্যানেলটাকে আরো সক্রিয় করতে চাই এবছর। খুব বেশি পারবো বলে মনে হয়না, তবুও মাঝে মাঝে নিজের মতামত শেয়ার করবো, একান্তই নিজের ফিউচার সেল্ফের জন্য। ‘না’ বলা শিখতে চাই, আরও দারুনভাবে। নিজের ভালোটা নিজে বুঝে নিতে চাই। তবুও কারো সাহায্যে আসতে পারলে , সেটা করতে প্রস্তুত থাকবো অবশ্যই। তবে যেখানে বা যাদের কাছে নিজের সম্মানটা নেই, সেখানে পা না দেয়ারই চেষ্টা থাকবে। এবং বারবারই সেখানে ‘না’ বলতে চাই। যারা নেগেটিভ ভাইভ দিবে, তাদের থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতে চাই। মানসিক শান্তি সবচেয়ে বড়, তাই নিজের শান্তির জায়গাগুলো নিজে খুঁজে নিতে চাই। কারো জন্য না, কাউকে ইমপ্রেস করতে না, নিজেকে ইমপ্রেস করতে সবকিছু করতে চাই। এক একটা দিন, আস্তে আস্তে নিজেকে আরও ভালো মানুষে পরিণত করতে চাই। মানুষকে কষ্ট কম দিতে চাই। শুনতে চাই মানুষের কষ্টের গল্প কিংবা সুখের। শ্রোতা হতে চাই। সুযোগ পেলেই কারো পাশে দাঁড়াতে চাই, হোক সেটা কাছের মানুষ কিংবা বাইরের কেউ। পুরো পৃথিবীটাকে দেখার নজর বদলে ফেলতে চাই। হতে চাই আরও পজেটিভ। নিজের আত্মবিশ্বাস, কমিউনিকেশন স্কিল এসব আরও বৃদ্ধি করতে চাই। কৃতজ্ঞ হতে চাই আরো বেশি। অল্পতে খুশি হয়ে যাওয়া শিখতে চাই। নিজের টুকটাক শখগুলো পূরণ করতে চাই। টং এর দোকানে চা খাওয়া, কিংবা বিএফসির চিকেন অথবা ডোমিনোজের পিজ্জা, হতেও পারে কোনো একটা বই কেনার শখ, বা কম দামী কিছু! মন চাইলেই বাসার বাইরে দু-এক পা হেঁটে আসার শখ। একাডেমিক যে ধাক্কাটা এবার খেয়েছি, সেই ধাক্কাটা হয়তো আর উতরে যাওয়া সম্ভব না, তবে সামনের দিনগুলোতে যতো কষ্টই হোক একাডেমিক দিক থেকে সাফল্য পেতে চাই। যেদিকেই পা রাখি, অর্জন করে নিতে চাই সেই রাস্তা। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে। যারা নিজের খুশির সময়গুলোতে আমাকে কাছে রাখেনা, তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবো। নিজেদের ব্যস্ততম সময়ে, যাদের জীবনে আমার প্রয়োজন বা গুরুত্ব ‘’শুন্য” তাদের থেকে সবসময়ই দূরে সরে থাকবো। যদিও কষ্ট দিয়ে না, সরাসরি ইগনোর করে না। তবুও আস্তে আস্তে নিজেকে এসব জায়গা থেকে সরিয়ে নিবো। যারা যারা সুখের সময় পার করছে, ঠিক ওই একই সময়ে আমি যদি কষ্টে থাকি, সেটা যাদের বোধগম্য হবেনা, তাদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখবো। মানুষের লাইফ নিয়ে একদমই ভাববো না। কারো প্রতি কনসার্নড হবো না। আমার জীবনে থাকা মানুষগুলো যে যার ইচ্ছেমতো চলতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রে তাদের কোনো আচরণ বা কাজে আমার কষ্ট হলে আমি চেষ্টা করবো তাদেরকে সুধরে না দিয়ে, নিজে সরে যাওয়ার। এতে করে কাউকে আমার জন্য বদলাতে হবেনা, কারো বদলানোর কারণ আমাকে হতে হবেনা। সবাই সবার মতো বাঁচতে পারবে। যারা আমাকে সবকিছুর উপরে রাখে তাদের জন্য সবকিছু করতে তৈরি থাকবো, তাতে যত কষ্টই হোক। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো প্রতিটা মূহুর্তে। তাদেরকে আগলে রাখার চেষ্টা করবো। আমি বিশ্বাস করি, এই দুনিয়ার সবচেয়ে দামী জিনিস সময়, সেই সময় কেউ আমাকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমার পেছনে ব্যয় করলে তার জন্য করতে প্রস্তুত থাকতেই হবে। নয়ত দিনশেষে, অকৃতজ্ঞ হয়ে যাবো নিজের কাছেই। সেই অকৃতজ্ঞ মানুষটা হয়ে বাঁচার ইচ্ছে নেই। তাই, যে করবে সে দ্বিগুন পরিমাণেই ফেরত পাবে। যে করবেনা, তার জন্য কোনো আফসোস থাকবেনা, কোনো ক্ষোভ, রাগ থাকবেনা। এসব মনেও রাখবোনা। তাদেরকে তাদের মতো ভালো থাকতে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। প্রিয় মানুষগুলোর কাছে, নিজেকে আরও এক্সপ্রেসিভ করতে চাই। জানিনা কতোটুকু পারবো। তবে চাই, তাদের জন্য কি কি করতে পারি, কতোটা পথ পাড়ি দিতে পারি এই ধারণাটুকু তাদের অন্তত থাকুক। সবসময়ই চাইবো তাদের প্রতি নিজের অনূভুতির জানান দিতে। তারা যেনো টের পায় তাদের জন্য কি ফিল করি আমি, এতোটুকুই শুধু! না পাওয়ার হিসেব ছিলো অনেক এই বছরটাতে, আগামী বছরে পাওয়ার হিসেবের খাতাটা ভর্তি থাকুক এটাই উপহার হিসেবে চাইবো নিজের কাছে। নিজের সৎ থাকা, পরিশ্রম করে যাওয়া, লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা, সব দিক থেকেই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। হতে চাই আরও বেশি নমনীয়, ব্যবহারের দিক দিয়ে অমায়িক। সর্বশেষে, সব কষ্টকে হারিয়ে দিয়ে, দিনশেষে হাসিমুখে ঘুমোতে যেতে চাই। এটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠ ইচ্ছা ২০২৪ সালের জন্য।

আপাতত এইটুকুই! সম্ভবত আমার দেয়া সবচেয়ে বড় ফেসবুক পোষ্ট হতে যাচ্ছে এটা। তবুও সেল্ফ রিমাইন্ডার হিসেবে থাকলো। নিজেকে বারবার এই লেখাটার সবকিছু বাস্তবে পূর্ণ করতে দেখতে চাই। আল্লাহ যেনো সেই তৌফিক দান করেন। আপনাদের যাদের যাদের নতুন বছরে কোনো লক্ষ্য আছে, সবার সেই লক্ষ্য যাতে পূরণ হয় সেই কামনাই করি। আপনাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো, রইলো দোয়া এবং ভালোবাসা। আমার জন্যেও সবাই দোয়া রাখবেন। এই বছরে যা যা খারাপ হলো তা পুষিয়ে গিয়ে, দ্বিগুন পরিমাণ ভালো কাটুক আপনাদের নতুন বছর। প্রিয় মানুষদের আগলে রাখবেন, কাছাকাছি থাকবেন এবং মন খুলে ভালোবাসবেন। বিদায় ২০২৩ এবং এবছরের মতো আপনাদেরকেও!

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

  • নতুন বছর সম্পর্কে গত কয়েক বছর যাবত কিছু লিখিনি। সেসব বছরগুলোতেও যথারীতি বহু জিনিস শিখেছি। হারিয়েছি প্রিয় মানুষদেরকে (প্রিয় মানুষ বলতে যে শুধুমাত্র প্রেমিকা বুঝিয়েছি এমনটা নয়)। সেই লিখতে না পারার পরেও, যা যা শিখেছিলাম সেসব মনে থেকে গিয়েছে আমার। তাই এবছরের লেখাটাতে একবারে যুক্ত করে দিলাম।

    বিষয়টা ক্লিয়ার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি কারণ, এবছর যাদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাত হয়েছে কিংবা পরিচয় হয়েছে বা যাদের কাছাকাছি আমি গিয়েছি, তারা এই পোষ্টটা পুরোটা পড়লে দ্বিধায় পরে যেতে পারেন, যেখানে মূলত তাদের কোনো দোষই নেই। বরং, হিসেব করলে দেখা যাবে এবছর এরাই আমাকে সবকিছুর পরেও বাঁচিয়ে রেখেছে। মানুষে বিশ্বাস করতে সাহস যুগিয়েছে। ভালোবাসতে শিখিয়েছে। তাই কখনোই চাইবোনা, এই পোষ্টটা পড়লে তাদের ভেতরে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হোক, যে তাদের দোষ থাকলেও থাকতে পারে। কিংবা তারা যথোপযুক্ত চেষ্টা করেননি আমার সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে! কারণ, খুঁজতে গিয়ে কেউ আঘাত পাবেন না বা নিজেদেরকে দায়ী ভেবে বসবেন না। কিছু কিছু অতীতের জিনিস যা আমাকে পোড়াচ্ছিলো সেসব লিখে রেখেছি এখানে, তবে সেটার পেছনে কোনোভাবেই এবছরে জীবনে আসা মানুষগুলো দায়ী নন। এবছর মানুষের কাছে আসা এবং ক্লোজ হওয়ার দিক থেকে দেখতে গেলে, আমি লাকীই ছিলাম। যারা বছরের শুরুতে ছিলো, তারা এখনো আমার জীবনে আছে। হ্যা, খানিকট নড়বড়ে হয়তো। খানিকটা দূরত্ব হয়তো বেড়েছে, ব্যস্ততাও বেড়েছে আমাদের সবারই। তবে তবুও এটা আবার টিকিয়ে রাখতে লড়াই করবো ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে পারলেই।

    সব কথার শেষ কথা, এবছরে যাদেরকে আমি আমার আশেপাশে কিংবা কাছে পেয়েছি, কারো থেকেই ভালোবাসা, কেয়ার এবং আগলে রাখা ব্যতীত কোনো কষ্ট বা আঘাত আমি পাইনি। তাই তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এবং এটা এবছরে আমার জন্য একটা ব্লেসিং-ই ছিলো বটে।হ্যা, টুকটাক ঝামেলা, ইস্যু হয়েছে হয়তো, তবে দিনশেষে সেই ঝামেলাটুকুকে আমি পরিবারের দুই সদস্যের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার মতোই ধরে নিয়েছি ❤️

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: