মানুষের জীবনের আফসোসের কি শেষ আছে কখনো? এইতো সেদিন মনে হয় আবিষ্কার করলাম আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি খুব। আবার ওই একই দিনে এটাও ভেবে বসে ছিলাম, কোনো একদিন বড় হয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলবো ভালোবাসি। অথচ, সময়টা শেষ হয়ে যায়। ওই ভাবনাটা আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা যান আমার। এরকম আমাদের জীবনে কতোশতো আফসোস বা ইচ্ছে শুধুমাত্র একটা মনেই বন্দি হয়ে থেকে যায়, তা ভাবনাতেই আনা কঠিন।
আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি, যারা তাদের ভালোবাসার মানুষটাকে প্রচন্ড ভালোবাসার পড়েও কাটখোট্টা ব্যবহার করে যায় প্রতিনিয়ত। অথবা বলা ভালো, কাটখোট্টা ব্যবহার হয়ে যায় তাদের দ্বারা। তাদের প্রিয় মানুষটাও তাদেরকে ওই কাটখোট্টা হিসেবেই মানতে থাকে। অথচ, কেউই হয়তো জানেনা গোপনে এবং লুকিয়ে নিজের মনের ভেতরে কতোটা পবিত্র ভালোবাসা পুষে রাখে মানুষটা। শুধুমাত্র প্রকাশের যেই অক্ষমতাটুকু, সেটাই তাকে বাধা দিয়ে ফেলে সারাজীবনের জন্য। আবার দেখবেন, প্রকাশের অক্ষম ব্যক্তিটার প্রিয় মানুষটা যখন হারিয়ে যায় তখন তার আফসোসের সীমাটাই আর থাকেনা। সে শুধুমাত্র ভাবতে থাকে, কেনো সময়মতো আমি এই জিনিসগুলো তাকে দেখাতে পারলাম না, কেনো বোঝাতে পারলাম না। আর এই আফসোসগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে খায় তখন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েকে অনেক ভালোবাসার পরেও রাগী চেহারাটাই ধরে রাখে সবসময়। কোনো কারণে তাদের ওই সন্তান হারিয়ে গেলে, তখন তারা রিয়ালাইজ করতে পারে তাদের পুরোনো রাগী চেহারাটা সঠিক ছিলোনা কোনোদিক থেকেই।
এই যে এতো সমস্ত আফসোস, সমস্ত কিছুই কিন্তু জীবন থেকে মানুষটা হারানোর পরেই। অথচ, এমনটাও নয় সেই সমস্ত মানুষের চিন্তা-চেতনা কিংবা মানুষিকতা খারাপ। অথচ সময়ের অভাব এবং সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস দেখাতে না পারাটা কতোটা আফসোসে ভোগায় মানুষদের। তখন এই এতো আফসোস কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার চাইতে, মরে যাওয়াটাও যেনো বেশ ভালোই মনে হয়। হওয়া উচিত ছিলো উল্টো। কেনো ভালো মানুষিকতা থাকার পরেও, চিন্তা-ভাবনা-চেতনা সঠিক থাকার পরেও কোনোদিন সেই প্রিয় মানুষটার প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনা সময় থাকতে?! জানা নেই আসলেও। এই প্রশ্নের জবাবটা আসলে দিবেও বা কারা? কেউ নেই, কেউ না!!!