আমরা কি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভাবি?

আমরা কি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভাবি?

মানসিক ট্রমা কিংবা মানসিক দূর্বলতাকে অনেকেই খুব হালকাভাবে নিয়ে ফেলে। দেখা যায়, যাদের কাছে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে তারাও, ‘সবার জীবনেই এরকম কিছু না কিছু হয়’, ‘সবাই-ই জীবনে এরকম কিছু না কিছু ফেইস করে’ ইত্যাদি টাইপের বুলি আওড়ায়। তবে একটা মানুষ ঠিক কিসের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে, কিসের কিসের সম্মুখীন হয়েছে, এবং সেই সমস্ত বিষয়গুলো তার উপরে ঠিক কতোখানি বাজে রকমের প্রভাব ফেলেছে, সেটা সত্যিই তার জীবনের সবকিছু নিজে ফেইস না করলে বলাটা সম্ভব নয়। এবং কেউ চাইলেই বলতেও পারবেনা৷ সবার জীবনেই এরকম হয়, বা ঘটে টাইপের বিষয়গুলোর কিছু নির্দিষ্ট সীমা আছে। এই সীমাগুলো কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বরং আরও বেশি এক্সট্রিম হয়ে যায়। একই রকমের জিনিস, একেকজনের নেয়ার ক্ষমতাভেদে তার কাছে গুরুত্ব পায়। রাস্তায় মারামারি হলে যেমন, কিছু মানুষ সেখানে দৌড়ে গিয়ে দেখতে থাকে কি হচ্ছে, অন্যদিকে ভিড় দেখে কিছু মানুষ জায়গাটাকে এড়িয়ে দ্রুত কেটে পড়লেই বাঁচে। এই একটা জায়গার ক্ষেত্রে যেরকম দেখা যায়, দুটো মানুষের দুইরকমের পার্সপেক্টিভ। ঠিক একইভাবে সবার নেয়ার ক্ষমতাও একেকরকম। তাই নিজের জায়গা থেকে কারো সমস্যা কিংবা মেন্টাল ইস্যুকে উড়িয়ে দেয়ার মতো যথাযথ কারণ কারো হাতেই আছে বলে মনে করিনা। প্রতিটা মানুষের জীবনেই কষ্ট আছে সত্য, তবে সেই কষ্টের কারণগুলো ভিন্ন এবং একই সাথে সেই কষ্টের ইমপ্যাক্টগুলো কারণভেদে থেকে শুরু করে মানুষভেদেও ভিন্ন।

আমি কিছু মানুষকে চিনি, যাদের অতিরিক্ত শব্দে সমস্যা হয়। আবার এমন মানুষকেও চিনি, যে ওই একই শব্দ শুনার পরেও, সাউন্ড আরও বাড়াতে বলবে। সুতরাং, প্রথম যে ব্যক্তি তাকে যদি আপনি ২য় ব্যক্তির উদাহরণ দেখিয়ে বলেন, ‘ওর তো সমস্যা হয়না, তোমার হচ্ছে কেনো?’ এই বিষয়টা মোটেও ভ্যালিড একটা বিষয় না। শব্দ জোরে আস্তে থেকে শুরু করে, চিৎকার-চেঁচামেচি, এক্সিডেন্ট সবকিছু দেখার এবং সহ্য করার সহনশীলতা আলাদা। কারো সমস্যা নেই এইসবে, এই বিষয়টাকে আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারলেও, কারো যে এইসবে সমস্যা থাকতেও পারে সেটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারিনা। তখন ওই নিজস্ব জায়গা থেকে, নিজস্ব চিন্তা-ধারার প্রভাব মানুষটার উপর বিস্তার করিয়ে, কিংবা সেটা বিস্তার না করতে পারলেও ওই দ্বিতীয় মানুষটাকে উদাহরণ হিসেবে আমরা কাজে লাগাই।

যে মানুষ ঘুমন্ত থাকা অবস্থায়ও চারপাশে কোন সাউন্ড শুনলে হঠাৎই লাফিয়ে উঠে এবং তার বুক ধরফর করতে থাকে, এসব বিষয়কে আপনার একদম স্বাভাবিক মনে হতেই পারে, তবে ওই মানুষটার জন্য সেটা ভয়াবহ-ও যে হতে পারে সেই বিষয়টাও আমাদের আমলে নিতে হবে। অন্তত চেষ্টাটুকু করতে হবে। তবে চেষ্টা না করে যদি, সেটাকে উড়িয়ে দেই, কার কার সমস্যা নেই সেটা তার সামনে জাহির করতে বসে যাই, তাহলে সেটা তাকে আরও অবিশ্বাসিই বানাবে। মানুষের প্রতি, আমাদের প্রতি, সমাজের প্রতি এবং সে হয়ে যাবে একা। চারপাশে তাকালে দেখতে পাবে, তাকে তার মতো করে বোঝার কেউ নেই। তার এঙ্গেল থেকে তার বিষয়গুলো বোঝার কেউ নেই। এবং সে ধরেই নিতে শুরু করবে, এইসব বুলি আওড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো সহানুভূতি নেই তাদের প্রতি। এসব বলে, আমরা তাকে শান্তনা দিয়ে গায়েব হতে পারলেই যেনো বেঁচে যাই। সে এরপর আবারও একা। আবারও, তার নিজেকে নিয়ে বাঁচতে হবে। কে বুঝবে, কে বুঝবেনা, এই হিসেব করতে করতে সে ব্যস্ত হয়ে যাবে। সে হয়ত নিজেও জানেনা, সে তাকে ধীরে ধীরে শেষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে আগুনে ঘি ঢালার মতো করে, তাদেরকে সেই শেষের দিকে ঠেলে দিচ্ছি আমরাও!

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: