অবরুদ্ধতার গল্প – প্রথম রিভিউ

অবরুদ্ধতার গল্প – প্রথম রিভিউ

অবরুদ্ধতার গল্প’, গল্প সংকলনটির প্রথম ২১ টি গল্পের রিভিউ।

• প্রতিবিম্ব – তানজিম রহমান

গল্পটা নব্বই দশকের একটা সময়ের, একজন দশ বছরের শিশুকে ঘিরে থাকা। একটা আয়না নিয়ে ঘটা রহস্যটা চলতে থাকলো এবং চমকে দিতে লাগলো নানা রহস্যে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ডিটেইলিং। লেখকের পড়া প্রথম গল্প আমার, তবে আশাহত হইনি।

• জম্বা – বাপ্পি খান

লেখকের ‘হার না মানা অন্ধকার’ এবং ‘ঘিরে থাকা অন্ধকার’, এই দুটো বই পড়া হয়েছে আমার। ‘ঘিরে থাকা অন্ধকার’ বইটির রিভিউ দেয়ার সময়েই বলেছিলাম তার গল্পের বর্ণনা আমার ভীষণ ভালো লাগে। এই গল্পটিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের একটা সময় নিয়ে বলা হয়েছে গল্পটা। যেখানে একজন ৮ বছর বয়সী মেয়ে এবং তার বাবা কিছু টুকটাক জিনিস নিয়ে বেড়িয়ে পরে আরেকটা জায়গার উদ্দেশ্যে। মুক্তিযুদ্ধের সময়গুলোর প্র‍তি ভীষণ আগ্রহ আমার, এবং এই সময়কার গল্পগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে সবসময়। তার উপর এতো দারুন ডিটেইলিং! একটা জায়গাতে বৈশাখী আগমনের কথা বলা আছে, যেখানটায় মনে হলো পুরো দৃশ্যটা চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি।

• কারাগার ৪৬০০ – তানজিরুল ইসলাম

‘কারাগার ৪৬০০’ এডভান্সড লেভেলের একটা কারাগার। যেটা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ কারাগারগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার সবকিছুই কন্ট্রোল করা হয় কোয়ান্টাম একটি কম্পিউটার দিয়ে। সেই কারাগাড়ে একটা বিধাল ঝামেলা বেধে যায়। কারাগাড়ের জেলার মিহনান রাশাদ খবরটা শুনে যখন সেখানে যান, ঘটে যায় অন্য এক ঘটনা। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে এই গল্পটা এবং ফিনিশিং।

• নেচার কোড – কৌশিক জামান

মনের মধ্যে থাকা খিটখিট করতে থাকা একটা ব্যাপার নিয়ে ভেবে যাচ্ছেন গল্পের কথক সাংবাদিক মহসিন আনোয়ার। তার মনে চলতে থাকা ব্যাপারটা নিয়ে সে পুরোটাই বললো তার সামনে বসে থাকা রাসেলকে, যার কাজ তারই কথাগুলো রেকর্ড করে গুছিয়ে লিখে ফেলা। তার কল্পনা, বাস্তব বা মনে চলতে থাকা সবকিছুই সে বলে ফেললো রাসেলকে। এর মধ্যে আছে নেচার কোড এর ব্যাখা এবং এটা দিয়ে কি কি করা যেতে পারে সেটাও। কিন্তু শেষে কি হলো? সেটা আমি একটু আধটু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম ঠিকই, তবে গল্পটার মজা এতে বিন্দুমাত্রও নষ্ট হয়নি।

• ডিমেনশিয়া – মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পি

সাই-ফাই বলা যেতে পারে গল্পটাকে। তবে থ্রিল এবং টুইস্টও আছে। রিক ব্রস্টম এবং তমালিকা নামের দুই নভোচারীকে নিয়ে ঘটতে থাকা এই গল্পটার প্রথমেই দেখা যায় চেয়ারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তমালিকাকে। আটকে রেখেছে রিক ব্রস্টম। পরবর্তীতে, কিছু কথা কাটাকাটির পরে তমালিকা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয় রিকের এস.এন.বি. হয়েছে। যেটার মানেটা না বলাই বোধয় ভালো হবে। রিককে বোঝাতে সক্ষম হলেও, রিকের তমালিকার পুরোটা কথা বিশ্বাস হয়না! শেষের দিকে এসে, বিশ্বাস-অবিশ্বাস উপড়ে ফেলে গল্পটা শেষ হয় দারুন এক টুইস্টের মাধ্যমে।

• ধোঁয়াটে বাতাসে, নালিশ রেখে যায় – ইমতিয়াজ সজিব

গল্পটা হৃদয় আর তার মায়ের। এখানে ওখানে অনেক কথা ছড়ায় তার মা-কে নিয়ে। সে সহ্য করতে পারেনা। মানতে পারেনা। কিন্তু যা ছড়ায় তা একদম ভুলও কিছু নয়। অনেকের জীবনেরই সাধারণ ঘটনাটা, অসাধারণ হয়ে ফুটে উঠেছে লেখকের বর্ণনায়। সর্বোপরি, আমার কাছে ভালোই লেগেছে।

• ত্রান কর্তা – রবিন জামান খান

গল্পটা আলহাজ্ব মোহাম্মদ মফিউজ্জামান তরফদারকে নিয়ে। যে একজন এমপি। এমপি হতে গিয়ে তার করতে হয়েছে বহু কসরত। এই জায়গাটার সঠিক ব্যবহার করছেন তিনি এখন। গল্পটার নাম দেখে বোঝাই যাচ্ছে গল্পটা কেমন হতে পারে! ত্রান সম্পর্কিত! কিন্তু ত্রান নিয়ে হুট করেই শেষ হয়ে যাবে গল্পটা? একদমই না! শেষের দিকে একটা টুইস্ট আছে। পড়তে শুরু করে সাধারণ গল্পটা সাধারণের মতোই লাগে, কিন্তু শেষ লাইনে গিয়ে হয়ে উঠবে অসাধারণ। আমার ব্যক্তিগতভাবে শেষ লাইনটা পড়ে যথেষ্ট তৃপ্তি এসেছে।

• কালিজিরা কাব্য ও একটি সরল সমীকরণ – আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য

গল্পটা জহির সোলায়মান নামক একজনের। তার জীবনের কিছু মানুষকে ঘিরে চলতে থাকা এই গল্পটার বর্ণনা এবং বিবরণে মুগ্ধতা প্রকাশ না করে উপায় নেই। ভেতরে কেমন একটা শুন্যতা বিরাজ করছে, গল্পটা শেষ হয়ে যাবার পরে! এর কারণ গল্পটা খারাপ এমন কিছু নয়, বরং এর কারণ গল্পটা মুগ্ধতা ছাড়িয়ে গিয়েছে তাই। এক কথায় অসাধারণ।

• নিঃসঙ্গতার দিনে – সাঈদ শিহাব

এই লকডাউনের সময়ে একটা মানুষের বিষন্নতা নিয়ে গল্পটা। লকডাউনের হিসেব রাখতে গিয়ে একটা সময় আর পেরে উঠেনা সে। প্রায়শই দেখতে পায়, কে যেনো একটা লাফ দিচ্ছে তার ওপাশেরই অর্ধসমাপ্ত দালান থেকে। কিন্তু, বাইরে গেলেই তাকে আর খুঁজে পায়না সে! কে মানুষটা? কে লাফ দেয় ওই ছাদ থেকে? কেনো দেয়? আর লাশগুলো কোথায় যায়!? শেষটা ধারণা করতে পেরেছিলাম অনেকটাই, তবুও অসাধারণ।

• সালিতারিও – তানিয়া সুলতানা

পরিবারের দিক থেকে শান্তি না থাকাটা খুবই কষ্টকর একটা ব্যাপার, প্রায় প্রতিটা মানুষের জন্যই। আর লোভ জিনিসটাও ভয়াবহ খারাপ। গল্পটার একজন চরিত্র, এই লোভের কারণেই বিয়ে করেন তার বর্তমান স্ত্রীকে। কিন্তু সে সুখী নন! মানষিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এভাবে থাকতে থাকতে। গল্পের শ্রোতা, গল্পের কথকের স্ত্রীকে তার এই মানষিক সমস্যার কথা জানাবেন কিনা ভাবতে লাগলেন! কিন্তু শেষটা? অজানা!

• এই গলিটা ভালো নয় – নজরুল ইসলাম

ধানের মৌসুম শেষ হয়ে গ্রামে বেশি কাজ না থাকায়, শহরে যায় আফজাল। সেখানে সবজি, তরি-তরকারি বিক্রি করে ভালোই অর্থ উপার্জন হয় তার। কিন্তু একদিন গল্পের নামের মতো একটা গলিতে ঢুকে পড়ে পুরো জীবনটাই বদলে যায় তার। কিন্তু কিভাবে? অসাধারণ বর্ণনায়, দারুন একটা গল্প।

• দাঁড়কাক – ইশরাক অর্ণব

গল্পটা একজন কর্ন্ট্যাক্ট কিলারের। যার নাম দাঁড়কাক। তবে তার কাজের ধরণ আলাদা। বাকি সবার থেকে ভিন্ন সে। মানবিক কিলার একজন। দাঁড়কাকের কাজের শুরুটা এবং একটা কিলিং এর কর্ন্ট্যাক্ট আসা নিয়ে চলতে থাকা এই গল্পটা শেষ হয়, তারই মানবিক কর্ন্ট্যাক্ট এর মাধ্যমে।

• সহানুভূতি ক্যাফে – শাহেদ জামান

একটা ক্যাফে যেখানে সহানুভূতি বা মানষিক প্রশান্তি দেয়ার জন্য আছে একজন। তাকে নিজের কষ্টের গল্পগুলো বলে যাচ্ছে গল্পের কথক। একটা পর্যায়ে এসে থেমে যায় শ্রোতা, কিন্তু কেনো? আর শুনছেই বা কেনো সে গল্পগুলো? উত্তর আছে, সহানুভূতি ক্যাফেতে।

• নারী অথবা না’রী – ওয়াজেদুর রহমান ওয়াজেদ

গল্পটা একটা মেয়ের জীবনের কয়েকটা ধাপের। যার জীবন আটকে আছে কয়েকটা গন্ডিতে। যেই গন্ডি সে কখনো পেরোতে পারেনি। বিষন্নতা, প্রকৃতি সব মিলিয়ে দারুন লেখনীর একটা গল্প। বেশ ভালোই লেগেছে আমার।

• বিপদ যখন আসে – সুস্ময় সুমন

একজন লেখকের গল্প। যার জীবনে, গল্পের নামের মতোই শেষ নেই বিপদের। করোনার সময়কাল এবং বিভিন্ন বিপদ পেরিয়ে চলতে থাকা গল্পটার এক পর্যায়ে, সম্ভবত চোর বা কেউ ঢুকে পড়ে লেখকের ঘরের ভেতরে। এরপরেই ঘুরে যায় গল্পের মোড়! কেনো ঘুরে যায়? সমাধান এবং উত্তর আছে বিপদ যখন আসে গল্পটির ভেতরে।

• অভিনব স্বাভাবিকত্ব – কিশোর পাশা ইমন

একটা উদ্ভট নামের ভাইরাসের আগমনের পরবর্তী ঘটনা এটি। গল্পের মূল চরিত্র কিছু একটা খুঁজে চলেছে প্রতিনিয়ত। নৃশংসতা, পরিস্থিতির বর্ণনা এবং জীবনযাপনের দারুন বিবরণ নিয়ে চলতে থাকা গল্পটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি ভীষণ।

• বাতিঘর – জাহিদ হোসেন

অনেক আগের সময়ের একটা গল্প। যখন কবিরাজদের উপর মানুষ খুব বিশ্বাস করতো। গল্পটা একটা কবিরাজেরও বলা যায়। মৃত্যুকে কি চাইলেই উপেক্ষা করা যায়? বা যারা জানে মৃত্যু কবে আসবে কারো, তারা কি চাইলেও মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ফেলতে পারে? গল্পটার নামের মতো বাতিঘর একটা ঘরের নাম। যেখানে আছে কিছু প্রদীপ। কিন্তু প্রদীপগুলো কিসের এবং কেনো? বর্ণনা, বিবরণ সব মিলিয়ে এটাও দারুন একটা গল্প।

• প্রহরি – কায়সার কবির

বাঘা একজন পুলিশ অফিসার এবং একই সাথে একজন বাবার গল্প। বাবা মেয়ের গল্প বলাটাই বোধয় শ্রেয় হবে। প্রচন্ড রাগী হলেও, যে তার মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসে। উপরে উপরে রাগী চেহারা ধরে রাখলেও এমন নয়, যে তার মেয়ে ভেতরে আবদ্ধ ভালোবাসাটুকু বোঝেনা। মেয়ে আর নাতনীকে চোখের সামনে দেখে সে খুব খুশি এবং একই সাথে বিষন্ন হয়ে যান! কারণ তিনি জানেন, একদিন সে আর এসব নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবেন না! বাবার-মেয়ের মধ্যাকার ভালোবাসার খুবই সুন্দর একটি গল্প।

• রাত তিনটেয় – প্রিন্স আশরাফ

একজন ডাক্তারের গল্প। গল্পের নামের মতোই প্রায় প্রতিদিন রাত তিনটায় তার কাছে আসে অজানা একজনের কল। স্ক্রিনের উপর লেখা থাকে ‘প্রাইভেট নাম্বার।’ তবে রহস্যটা ‘কে’ এই প্রশ্নটা নিয়ে যতটুকু, ঠিক ততটুকুই ‘কেনো’ এই প্রশ্নটা নিয়েও। কোনো রোগী নাকি অন্যকেউ? জানেনা সে! তবে উত্তরটা ঠিকই পায় সে। পেতে পেতে ফেঁসে যায় আরেকটা ফাঁদে!

• রুম নাম্বার তিন – নিয়াজ মেহেদী

এনায়েত। যার বদলি হয় ভিন্ন এক জায়গায়। এবং থাকতে হবে একটি সরকারী অতিথিশালায়, দো’তলার তিন নাম্বার রুমে। গা ছমছমে এক পরিবেশে এসে সে ভীষণ বিরক্ত। সেদিন ঘুম ভেঙ্গে যায়, যখন সূর্য ডুবে গিয়েছে। চা খেতে হেঁটে যেতে হয় বহুদুর। এরপরে ফিরে যায়, খেয়ে নেয় এবং ঘুমোতে চলে যায়। কিন্তু ছমছমে পরিবেশের সেই রাতটা হয়তো তাকে আটকে রাখে নিজের কোনো রহস্যে!

• যাদুর শহর – নেওয়াজ নাবিদ

গল্পটা দেশে বহু সময় ধরে হয়ে আসতে থাকা একটা ঘটনাকে নিয়ে। ঢাকার রাস্তায়, রাতে চলাফেরা করতে থাকা দুজন পড়ে যায় এক প্রকার বিপদে! যেখানে তাদেরকে ফাঁসিয়ে দিতে চাওয়া হয় কোনো এক অপরাধের মিথ্যে বেড়াজালে। কিন্তু সম্ভব কি হবে তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়া!? বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা দারুন একটা গল্প! এবং তার সাথে ঢাকার রাস্তাঘাট, রোমাঞ্চকর বর্ণনা তো আছেই।

বইঃ অবরুদ্ধতার গল্প (গল্প সংকলন)
সম্পাদনায়ঃ শরীফুল হাসান
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
ধরণঃ মিশ্রিত
মূল্যঃ বিনামুল্যে প্রকাশের জন্য পিডিএফ
বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ ‘অবরুদ্ধতার গল্প’, গল্প সংকলনটি বাতিঘর প্রকাশনী থেকে শরীফুল হাসানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। লকডাউনের সময়টায় যখন মানুষ ঘরবন্দী, তখন বাতিঘর প্রকাশনীর সকল লেখকদের পক্ষ থেকে বইপড়ুয়াদের জন্য এই গল্প সংকলনটি ‘পিডিএফ’ আকারে বিনামূল্যে প্রকাশিত করা হয়।

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: