কাঠগড়া – সামসুল ইসলাম রুমি

কাঠগড়া – সামসুল ইসলাম রুমি

কাঠগড়া - সামসুল ইসলাম রুমি

একজন তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন আইনজীবী শাহীনুর রায়হান, যার বুদ্ধির তুলনা নেই একদমই। খুবই স্মার্ট এবং যথেষ্ট ঠান্ডা মস্তিষ্কের যিনি। এরকম একটা মানুষও কি স্বার্থের পেছনে? নাকি তিনি স্বার্থের পেছনে যারা তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছেন স্বেচ্ছার? কে জানে সেই রহস্য? যেই আগুনের তান্ডবে এতো ধোঁয়া উড়ছে, মানুষ চিৎকার করছে, মরছে একের পর এক, সেখানে স্বার্থ উদ্ধারে নেমেছেই বা কারা? তাদের চাহিদাই বা কি? সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন কাঠগড়ার পৃষ্ঠায়!

পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পটা শুরু হয় একজন আইনজীবীর দক্ষতা কেমন সেটা দেখিয়ে, যেটা খুবই ভালো লেগেছে। এরকম একটা স্মার্ট আইনজীবীর গল্প পড়তে গেলে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সেটা একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়, আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিলো।

গল্পটার সবচেয়ে স্ট্রং পার্ট হচ্ছে গল্পের প্লট নিজেই। অযথা, প্লট প্যাচিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করেননি লেখক। যতোটুকু দরকার ছিলো, ঠিক ততোটুকুই দৃশ্যমান ছিলো গল্পে। এমন একটা প্লট নিয়ে লেখক কাজ করেছেন, যেটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই মনে হচ্ছে স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই সেভাবে কিছুই বলছি না। গল্পের ব্যাপারে টুকটাক যা বলার উপরেই বলে দিয়েছি।

এরপরে যেটা না বললেই না, সেটা হচ্ছে গল্পের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। ১৬০ পৃষ্ঠার একটা গল্পে লেখক ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট-এর দারুন খেলা দেখিয়েছেন। কিভাবে সেটা তিনি করেছেন জানা নেই, তবে ক্যারেক্টারগুলো আমার মনে বেশ ভালো রকমেরই প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। এতো অল্প সময়ে মনের একটা জায়গা দিয়ে দিয়েছি ক্যারেক্টারগুলোকে। সবারই ইনফ্লুয়েন্স গল্পটায় আছে। ক্যারেক্টারগুলোকে ভালোই জায়গা দিয়েছেন লেখক, তারা গুরুত্বপূর্ণ জটগুলো ছাড়াতে সাহায্য করবে পাঠককে।

প্লট গেলো, ক্যারেক্টার গেলো, এরপরে আর কি থাকে? লেখনী? যদিও সেটা নিয়ে কথা বলাটা আগেই প্রয়োজন ছিলো, তবে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছি। কারণ, এটা নিয়ে বিশাল আকারে বলতে হবে। তবুও সংক্ষেপ করার চেষ্টাটা চালিয়ে যাবো। এই একটা জায়গায় লেখকের প্রতি আমার অভিযোগ রয়ে গিয়েছে। ১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই কিনলাম, গল্পটা এবং চরিত্রগুলোর সাথে কিছুক্ষন থাকার জন্য সেটা লেখক হতে দিলেন না। লেখকের লেখার হাত এবং ভঙ্গিমা এতোই সাবলীল যে গল্পটা পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। এতো সাবলীল আর সহজ-সরল ভাষায় গল্প লিখলে বরং সেটাই স্বাভাবিক। পড়তে কম সময় লাগলেও, ক্যারেক্টারগুলোর প্রতি যে টান অনুভব করেছি সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে লেখকের লেখার যে ধাঁচ, সে হিসেবে মনে হয়েছে আরও দু-চারশ পৃষ্ঠা থাকতে নিমিষেই পড়ে ফেলা যেতো।

গল্পের শেষের দিকের অংশটুকু পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো কিছু উত্তর পাচ্ছিনা। কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছিলো, ভেবেছিলাম লেখক হয়তো গল্পের শেষদিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেছেন কিংবা ভুলে গিয়েছেন এরকম কিছু বাদ যাচ্ছে তার লেখায়। তবে আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে, পরবর্তীতে সময়গুলোতেই লেখক সবটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

একেবারে শেষের দিকে এসে যখন দুই-এক পৃষ্ঠা বাকি একটা প্রশ্ন মনে ঘাটাচ্ছিলো বেশ। কিন্তু উত্তর পাচ্ছিলাম না, ওইদিকে পৃষ্ঠা আর বাকি নেই বেশি। লাইনের পরে লাইন পড়ে যাচ্ছি, তবে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত। এরপরে একদম শেষ লাইনে এসে লেখক দারুন ভাবে সেই উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। যদিও সেই উত্তরটা হজম করা সহজ ছিলোনা। আর উত্তরটা এমনভাবে দিয়েছেন লেখক, যেটাতে মনের মধ্যে হাহাকার রয়ে গিয়েছে প্রবল। ১৬০ পৃষ্ঠায় কিছু একটা তুলে এনে, সেটাকে নিয়ে একদম শেষ অধ্যায়ের, শেষ লাইনে যে হাহাকার সৃষ্টি করেছেন লেখক, তা পাঠককে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

সর্বোপরি, পুরো গল্পটাই বেশ দারুন উপভোগ্য ছিলো। আইনজীবীদের তদন্তের প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে দারুন আইডিয়া পেলাম। আরেকটা দারুন বিষয় হচ্ছে, লেখা পড়েই মনে হচ্ছিলো লেখক বেশ পরিশ্রম দিয়েছেন গল্পটার পেছনে, তবে এটা সেই দারুন বিষয়টা না। দারুন বিষয়টা হচ্ছে, এতোকিছু জানার পরেও লেখক পুরো বই জুড়ে পাঠককে এমন কিছু ফিল দেয়ার চেষ্টা করেননি যে লেখাটা যারা আইন বিষয়ে জানে তাদের জন্য। বরং, তিনি সবকিছু খুবই সহজ স্বাভাবিকভাবে সবকিছু বলে গিয়েছেন। যেটা সবচেয়ে বেশি টেনেছে গল্পটার প্রতি। আইন বিষয়ক কিছু না জেনেও, এই বই ধরার সাহস করে যে ভুল করিনি সেটা লেখকের এই কর্মগুনের জন্যেই সম্ভব হয়েছে। সবশেষে, কাঠগড়া দারুন একটা গল্প। যারা বাংলা সাহিত্যে কোর্টরুম থ্রিলার বা কোর্টরুম ড্রামা পড়তে আগ্রহী, কিন্তু এতোদিন পড়ার মতো কিছুই খুঁজে পাননি, লেখকের তরফ থেকে এটাই তাদের জন্য গিফট। আশা করছি, সামনে আরও ভালো কিছু উপহার দেবেন সম্ভাবনাময় এই লেখক। আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫।

বইঃ কাঠগড়া
লেখকঃ সামসুল ইসলাম রুমি
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: