শব্দজাল – রবিন জামান খান

শব্দজাল – রবিন জামান খান

সারসংক্ষেপঃ বইটার নাম শুনলেই প্রথমে ধারণা চলে আসে বইটা কি নিয়ে হতে পারে। এক বা একাধিক শব্দের জাল নিয়ে? হ্যা ঠিক তাই। লেখকের লেখা আরো বই আমার কাছে থাকলেও এটাই আমার পড়া প্রথম বই। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হিসেবে ধরে নেয়া যায় বইটাকে।

মাত্র একদিনের মধ্যে ছাই হয়ে যাবে ঢাকা শহর। সময় মাত্র এক রাত। দায়িত্বে একজন সাইকোলজির প্রফেসর। মূল প্রশ্ন হচ্ছে, সেই প্রফেসর কি পারবে ফাতাহ নামের বোমারু লোকটার মুখ থেকে তথ্য আদায় করতে? নাকি শেষ হয়ে যেতে যাচ্ছে ঢাকা শহর? উত্তরটা বইতেই আছে। বোমারুর শর্ত একটাই, তাকে ছেড়ে দেয়া হলে সে জানিয়ে দেবে আছে কোথায় বোমগুলো।

প্রফেসরের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, হোমওয়ার্ক করা নেই, হাতে সময় নেই। ফাতাহ নামের সেই বোমারুর কাছে তার একটাই বক্তব্য, সে শুধু একটু কথা বলতে চায়। অদ্ভুত এক শর্তে রাজী হয়ে যায় ফাতাহ নামের সেই বোমারু। এখান থেকেই মূলত গল্পের শুরু। চলতে থাকে গল্প, চলতে থাকে কথার মারপ্যাচ। হুট করেই যখন আপনার মনে হবে একজন হেরে যেতে নিচ্ছে, ঠিক তখনই জিতে যাবে সে। আবার যখন মনে হবে কেউ জিতে যাচ্ছে হেরে যেতে থাকবে সে। একটা আসামীর পুরো জীবন সম্পর্কে বলা গল্পটা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে বই। একের পর এক টুইস্টে চলতে থাকা গল্পটা শেষ হয় অসাধারণভাবে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইটার সবচেয়ে স্ট্রং দিক আমার মতে ডায়ালোগ। আমি প্রতিটা ক্যারেক্টার, প্রতিটা কথোপকথন আমার চোখের সামনে দেখছিলাম। কিছু কিছু সময় প্রফেসরের পক্ষে, আবার কিছু কিছু সময় ফাতাহ নামের সেই আসামীর পক্ষে রয়ে গিয়েছি। টুইস্ট পড়তে পড়তে হুট করেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছি, নয়তো আঘাতে চুপচাপ বসেই রয়েছি। ডায়ালোগ ডেলিভারি, স্টাইল সবকিছুই অসাধারণ বইটার। শুধুমাত্র একটা রুমের অভ্যন্তরে বসে থাকা দুইজন মানুষের কথোপকথনে চলতে থাকা কথাগুলো যে এতো দারুন হতে পারে আমি কখনো ভাবিনি।

শুরুতে বেশ কিছুক্ষন গতিটা একটু স্লো ছিলো। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এর জন্য হয়তো সেই গতিটা স্লো হয়েছে। তবে সেটা পেরিয়ে যাবার পরেই যখন আসল কথোপকথনের শুরু তখন আর বইটা রেখে ওঠাটা সম্ভব হয়নি আমার। আমি বারবার বইটার ডায়ালোগের প্রশংসা করবো। কাহিনি, কাহিনির পেছনের কাহিনি, সেটার পেছনের কাহিনি সব এবং টুইস্ট সব মিলিয়ে দারুন একটা প্যাকেজ এই গল্পটা। আর হ্যা, অবশ্যই ইমোশনাল এটাচমেন্টের কথা না বললেই নয়। বইটার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি দ্বিধায় পড়ে যাবেন আপনি কার পক্ষে থাকবেন, আপনি কার জয় চাচ্ছেন। পরক্ষণেই আবার যাকে জেতাতে চাচ্ছেন, মনে হবে সে হারলেই বোধহয় আপনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।

আমি অনেকদিন পরে একটা ভালো বই পড়লাম। একটা থ্রিলার এভাবেও লেখা সম্ভব আমার ধারণারও বাইরে ছিলো। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, অভিনয়ে অনেকটা প্যাশন থাকার কারণে ডায়ালোগগুলো পড়ার সময় আমি নিজে নিজে সেগুলোকে ডেলিভারি দিয়েছি। একবার ওই ক্যারেক্টার, তো আরেকবার ওই ক্যারেক্টার। এবং এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি এঞ্জয় করেছি আমি। লেখককে বলেছিও, আই উইশ যদি আমি প্রফেসর কিংবা ফাতাহ এই দুটোর যেকোনো একটা ক্যারেক্টার প্লে করতে পারতাম আমার চাইতে বেশি খুশি কেউ হতোনা। একই সময়ে চোখের সামনে সবকিছু ভাসতে থাকা, ওই সময়েই আবার নিজেকে সেই ক্যারেক্টার হিসেবে চিন্তা করার মজা এই প্রথম পেলাম। খুবই অসাধারণ এবং স্ট্রং ডায়ালোগে ভরা এই বইটা আমি আশা করছি সবার ভালো লাগবে। কাহিনি নিয়ে বেশি কিছু বলছিনা, কারণ অবশ্যই টুইস্ট তো আছেই। আর তাছাড়া ডায়ালোগের ঘোরই কাটছেনা আমার এখনো।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হিসেবে বেশ দারুন একটা বই। সাইকোলজির ব্যাখা এবং কিছু কিছু টার্মস ব্যাখা করা আছে বইটাতে। ঘটনা, টুইস্ট, ডায়ালোগ সব মিলিয়ে পড়ার মতো একটা বই। লেখককে ধন্যবাদ এতো সুন্দর বইটার জন্য। আশা করছি, আগামী দুটি বইয়ে প্রফেসর জাকারিয়া এবং ফাতাহর দারুন কিছু খেলা দেখা যাবে। সেই অপেক্ষায়।

বইঃ শব্দজাল
লেখকঃ রবিন জামান খান
প্রকাশনীঃ নালন্দা
প্রচ্ছদঃ শেখ মাহমুদ ইসলাম মিজু
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: