দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

দরিয়া-ই-নুর-মোহাম্মদ-নাজিম-উদ্দিন

মানুষের জীবনে কিছু এমন অধ্যায় থাকে, যেই অধ্যায়গুলোকে চাইলেই মানুষ ভুলে যেতে পারেনা। সেগুলো তাকে পোড়ায়, বাধ্য করে আরও জঘন্য কিছু করতে। কিছু কিছু অতীত ভুলে যাওয়াটা আসলেই কখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনা মানুষের জন্য। নতুন জীবনেও সেই বিশ্রি অতীত তাকে জ্বালাতে-পোড়াতে থাকে। যতোটাও সহজ মনে হচ্ছে উপরের কথাগুলো, ততটাও সহজ নয় সবকিছু। আর এসব মিলিয়েই দরিয়া-ই-নুর।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: ছোট একটা গল্পে এতো বিশাল পরিসরে মনে জায়গা দখল করে নেয়া লেখক বোধহয় এই একজনই আছেন। তিনি গল্প বলতে বলতে টেনে আনেন চরিত্রগুলো, যারা আপনার সামনেই হাঁটবে, চলবে, আবার জড়িয়েও যাবে রহস্যে। সেভাবেই শুরু হয় গল্পটা। একটা চরিত্র যে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তার জীবনটা কেমন হতে পারে সেটা বলার মধ্য দিয়েই গল্পটা শুরু করেছেন লেখক। এরই ভেতরে বলে গিয়েছেন মূল চরিত্রের কিছু চড়াই-উতরাই। কেনো সে জেলে? কি অপরাধ তার? সুন্দর জীবন তো সবারই প্রাপ্য, সেই সুন্দর জীবনের লোভ? নাকি ঠকে যাওয়া কোনো মানুষ হয়েই তার ঠিকানা হয়েছে জেল? সেই উত্তর দেয়া আছে দরিয়া-ই-নুর গল্পে।

পড়তে গিয়ে বারবার অজানা আশংকা তৈরি হয়েছিলো বুকের ভেতরে। তাহলে কি উনিই এসবের জন্য দায়ী? নাকি সে? নাকি কেউ না? এই প্রশ্নগুলো যখন একটা ছোট লেখা পড়তে গিয়ে বারবার আসে, তখন বলাই বাহুল্য লেখক সেখানে সফল। তবে তারচেয়েও সফল তিনি তখনই হয়েছেন, যখন এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর মনের সামনে উঁকি দেয়ার পরেও দেখা যায় আমাদের ভাবনার উত্তরগুলো মিথ্যা।

বারবারই এই আশংকা তৈরি করতে গিয়ে মনোযোগ দিয়েছেন চরিত্রগুলোতেও। একেকটা চরিত্রের ভার ছিলো বিশাল। চরিত্রগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি, যেটা আসলে সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। ছোট পরিসরের গল্পে চরিত্রের ডেভেলপমেন্ট করাটা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। গল্পটা শেষ করার পরে চরিত্রগুলো আপনার সাথে থেকে যাবে বহুদিন।

কে আপন, কে যে পর সেই ভাবনাটা আমাকে ভাবিয়ে গিয়েছে পুরো গল্প জুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারেও শুরতেই ভেবে নিয়েছিলাম, এভাবে ভাবনার তীর সঠিক জায়গাতেই লাগবে। তবে এবারেও পাঠক মনকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে জিতে গিয়েছেন লেখক।

গল্পটার সবচেয়ে দারুন বিষয় হচ্ছে এটার ফিনিশিং বা এন্ডিং। শেষে খুব কম সময়ে সবকিছু চোখের সামনে টেনে এনে লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন তার লেখনীর সবচেয়ে জাদুকরী কৌশল। ফিনিশিংটা এতো সুন্দর যা খুবই প্রশংসনীয়। আমার ভেতরে দারুন অনুভূতি হচ্ছিলো শেষের লাইনগুলো পড়তে গিয়ে। হচ্ছিলো মিশ্র অনুভূতি। কিছুটা কষ্টের, কিছুটা হয়তো সুখের। তবে যেই অমরত্ব তিনি শেষে এসে চরিত্রকে দিয়েছেন, সেটার জন্যেই গল্পটা বহু পাঠকের মনে জায়গা করে রাখবে সারাজীবনের জন্য।

সর্বোপরি, বলতে বলতে অনেক কিছুই বলে ফেললেও, এই গল্পটার ইফেক্ট আমার জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে তা আমি বলতে ব্যর্থই হবো বরাবরের মতো। আরও একবার, ঞ্চ

এক বসায় পড়ে ফেলার মতো গল্প দরিয়া-ই-নুর। যা আপনাকে জাগিয়ে রাখবে, বসিয়ে রাখবে গল্পটা শেষ না করা অবধি।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ভুলেও বইটা নিয়ে হাসনাহেনা নামক কোনো মেয়ের পাশে বসবেন না, তাহলে আপনি তাকে ভয় পেতে শুরু করতে পারেন।

বইঃ দরিয়া-ই-নুর
লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০

শেয়ার করুনFacebookTwitterWhatsApp
লিখেছেন
সিয়াম মেহরাফ
আলোচনায় যোগ দিন

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ

সিয়াম মেহরাফ একজন লেখক এবং গল্পকথক। তার বর্তমান মৌলিক বইয়ের সংখ্যা দুইটি। লেখালিখির পাশাপাশি অভিনয়ও তার আরেকটি প্যাশন।

নোটঃ

এই ওয়েবসাইটটির সকল ছবি, লেখা এবং ভিডিও সিয়াম মেহরাফ দ্বারা সংরক্ষিত। ওয়েবসাইটটির কোনো তথ্য ক্রেডিট কিংবা কার্টেসি ছাড়া কপি না করার অনুরোধ রইলো।

error: